গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ক্ষোভ

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতেমা তুজ জিনিয়ার সাময়িক বহিষ্কার-আদেশ নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন সংবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য।

গোপালগঞ্জ প্রতিনধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2019, 11:59 AM
Updated : 17 Sept 2019, 12:13 PM

উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলে এ নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিনের সমালোচনা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য কথায় কথায় বহিষ্কার করেন। গত দুই বছরে তিনি ৩৪ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন। পরে তাদের অনেকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের খবর পাওয়া গেলেও সবার খবর জানা যায়নি।

উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। ওই সব পোর্টাল কোনো প্রকার তথ্য যাচাই না করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে তথ্য না নিয়ে একতরফা সংবাদ পরিবেশন করছে।”

জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ নিয়ে তিনি বলেন, “জিনিয়া অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে। পাশাপাশি কুৎসা রটনা করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষিকাদের ফেসবুক, ইমেইল আইডি হ্যাক করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইট হ্যাক করে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের ষড়যন্ত্র করেছে।”

উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে অন্য এক শিক্ষার্থী ও ‘জিনিয়ার’ ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের কথোপকথনের স্ক্রিনশট তুলে ধরেন।

সেখানে জিনিয়া কয়েকজনের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করার কথা প্রকাশ করেন বলে উপাচার্যের দাবি।

এছাড়া উপাচার্য বলেন, “জিনিয়া সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে।”

এ বিষয়েও কথোপকথনের স্ক্রিনশট তুলে ধরেন উপাচার্য। জিনিয়া ‘সিনিয়র শিক্ষকদের অবৈধ সম্পকের্র বিষয়ে’ ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে উপাচার্যের দাবি।

জিনিয়াকে সরকারবিরোধী সংগঠনের নেতা দাবি করে তিনি বলেন, “সে সরকারবিরোধী সংগঠনের নেতা ও বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রেখে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

“জিনিয়া বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে মিথ্যাচার ও অশালীন মন্তব্য করেছে। অথচ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের কোনো টাকা এখনও খরচ হয়নি। শিক্ষকদের অপমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা একজন শিক্ষার্থী হিসাবে অন্যায়, গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

তিনি তার কক্ষে জিনিয়াকে ‘তলব’ করেছিলেন জানিয়ে বলেন, “এসব বিষয় নিয়ে জিনিয়াকে আমার কক্ষে তলব করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে উল্টোপাল্টা কথা বলে। কথা প্রসঙ্গে আমি তাকে সন্তান হিসেবে দাবি করে বেয়াদব ও ফাজিল শব্দ উচ্চারণ করি।

“জিনিয়া অনুমতি না নিয়ে আমার ও তার মধ্যকার কথা গোপনে মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে। এ ভয়েস রেকর্ড সে ইউটিউব, ফেসবুকে প্রচার করেছে। অনেক নিউজ পোর্টাল জিনিয়াকে ভিসি গালমন্দ করেছে বলে নিউজ প্রচার হচ্ছে।”

তিনি জিনিয়াকে গালমন্দ করেননি বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।

এ বিষয়ে জিনিয়া বলেন, “তিনি আমার সাথে ভিসিসুলভ আচরণ করেননি। তার কাছ থেকে আমি বেয়াদব ও ফাজিল শব্দ আশা করিনি। এতে আমি বিব্রত হয়েছি। আমার পিতা আমার সাথে খারাপ আচরণ করেনি। তাই ভিসি পিতা হিসেবে যৌক্তিক প্রশ্নে আমার সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না।

“আমি ফেসবুকে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে কোনো পোস্ট করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ নষ্ট হয় এমন কোনো পোস্টও আমি দেইনি। আমি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত এই পোস্টটি করেছি। এর বাইরেও যদি কোনো পোস্ট থেকে থাকে সেটি আমার নয়। ফেক আইডি থেকে করা হতে পারে। সেটা আমার দায়িত্ব না। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে যেসব স্ট্যাটাস সরবরাহ করা হয়েছে সেসব আমার নয়।”