সোমবার জেলার ২ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এস এম মোসলেহ উদ্দিন মিজান এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে পলাতক ২১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিরও আদেশ দেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে ৭ জন জামিনে আছেন, ২১ আছেন পলাতক এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে যোগ হয়েছে পুলিশের এসআই আকরাম শেখ।
মামলা দয়েরের সময় বাদীর আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন বাবুল বলেন, ২০১১ সালের ২৭ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের টেকের বাজারে পুলিশের গাড়ি থেকে কিশোর শামছুদ্দিন মিলনকে নামিয়ে দেওয়ার পর একদল লোক ‘ডাকাত’ আখ্যায়িত করে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
কোম্পানীগঞ্জের চর ফকিরা গ্রামের কিশোর মিলন ২০১০ সালে স্থানীয় কবি নজরুল উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও অর্থের অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন বিদেশ থেকে বাবার পাঠানো ১৪ হাজার টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রির জন্য উপজেলা সদরে যাচ্ছিলেন মিলন। পথে চর কাঁকড়া ব্যাপারি স্কুলের মসজিদের সামনে ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন ও সহযোগী মিজানুর রহমান মিলনের পরিচয় জানতে চান। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরও তারা মিলনের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে পুলিশে দেয়। পরে পুলিশ থানায় নেওয়ার পথে টেকেরবাজারে বিক্ষুদ্ধ জনতার হাতে তাকে ছেড়ে দেয়। সেখানে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ঘটনার কয়েকদিন পর মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওচিত্রে এই হত্যার ছড়িয়ে পড়লে তা গণমাধ্যমে সংবাদ হয় এবং দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়।
আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন বাবুল বলেন, এ ঘটনায় মিলনের মা কোহিনুর বেগমের দায়ের করা মামলায় ২০১৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি আতাউর রহমান ভূঁইয়া সব আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন।
“কিন্তু আদালত পুলিশের ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)।”
“এতে চর কাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য জামাল উদ্দিন, তার সহযোগী মিজানুর রহমান মানিকসহ ২৯ জনকে আসামি করা হলেও কোনো পুলিশ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”
গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, এরপর সোমবার ছিল মামলার ধার্য তারিখ। এ তারিখে বিচারক হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কোম্পানীগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই আকরাম শেখকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
এদিকে, অভিযোগপত্রের আসামিদের একজনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মামলাটি পরে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে অ্যাডভোকেট কল্পনা রানী দাসকে আইনজীবী নিয়োগ দেয়।
কল্পনা রানী দাস বলেন, বার বার সময়ক্ষেপণের পর অবশেষে মামলাটির বিচারের পথ সুগম হলো।
মামলার অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই আকরাম শেখকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।