অগ্নিনিরাপত্তা: সতর্কবার্তায় কান দেয়নি মিনিস্টার কারখানা কর্তৃপক্ষ

গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় মাইওয়ান ইলেকট্রনিকসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডে অগ্নিনির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় আগেই সতর্ক করেছিল কলকারখানা অধিদপ্তর।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2019, 11:10 AM
Updated : 14 Sept 2019, 03:50 AM

অগ্নি নিরাপত্তায় ত্রুটির কথা জানিয়ে ২০-২৫ দিন আগে কারখানা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও তারা সাড়া দেয়নি জানিয়ে কলকারাখানা অধিদপ্তরের সহকারী মহা পরিদর্শক মো. মোতালিব মিয়া বলেছেন, এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে অধিদপ্তর।

শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে ছয়তলা ওই কারখানা ভবনের ষষ্ঠ তলার ইলেকট্রনিক সামগ্রীর গুদামে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়, পরে তা পাশের আরেকটি ছয়তলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর বেলা ১২টা ৫৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক (সদর দপ্তর) দেবাশীষ বর্ধন জানান।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর দুপুরে কারখানা চত্বরে এক ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কারখানা ভবনের ষষ্ঠ তলায় ছাদের ওপরে ওই গুদাম তৈরি করা হয়েছিল। কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী সেখানে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল।

“মালামাল ভর্তি ওই গোডাউন সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। মালামালগুলো এমনভাবে গাদাগাদি করে রাখা ছিল যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পক্ষে ভেতরে ঢোকা সম্ভব ছিল না । তারপরও আমাদের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”

জিল্লুর রহমান জানান, আগুনে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, তাও জানা যায়নি এখনও।

“আগুন সম্পূর্ণ ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ায় নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। কারখানায় আগুন নেভানোর নিজস্ব পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও ব্যবস্থাপনা ছিল বলে আমাদের চোখে পড়েনি।”

ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনিও ওেই কারখানায় অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা দেখেননি। পাশের মার্কওয়্যার লিমিটেডের জলাশয় ও পানি ব্যবহার করে তাদের কাজ চালাতে হয়েছে।

কারখানাটির ফায়ার লাইসেন্সও নবায়ন করা হয়নি। গত ৩০ জুন তাদের ফায়ার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মামুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, প্রতিবছর কারখানার ফায়ার লাইসেন্স নবায়নের নিয়ম রয়েছে। এ কারখানাটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় ৩০ জুন। সম্প্রতি কারখানা কর্তৃপক্ষ নবায়নের জন্য আবেদন করলেও শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।

সকালে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কলকারাখানা অধিদপ্তরের সহকারী মহা পরিদর্শক মো. মোতালিব মিয়া।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই কারখানায় নিয়মিত অগ্নি নির্বাপন মহড়ার আয়োজন করা হত না। ছয় তলার ওপরে যেভাবে গুদাম বানিয়েছে, সেটাও নিয়ম বহির্ভূত।”

তিনি জানান, কারখানায় ফায়ার অ্যালার্ম ও অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় ২০-২৫ দিন আগে কর্তৃপক্ষকে নোটিস দিয়েছিল কলকারাখানা অধিদপ্তর। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি।

অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মাইওয়ান ইলেকট্রনিকস ও মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি শুধু বলেন, “ওই সময় কারখানায় কাজ বন্ধ ছিল। কীভাবে ছয় তলায় আগুন লাগল তা আমরা এখনও বুঝতে পারছি না।”

কোম্পানির হেড অব মিডিয়া কে এমজি কিবরিয়া জানান, কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক হোম অ্যাপ্লান্স প্রডাক্ট ষষ্ঠ তলায় মজুদ করে রাখা ছিল। তবে সেখানে কত টাকার পণ্যসামগ্রী ছিল, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি।

মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের ডিজিএম (অ্যাকউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ওই কারখানায় টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর সংযোজনের পাশাপাশি রাইস কুকার, ইস্ত্রিসহ বিভন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরি করা হয়। প্রায় দুই হাজারের মত কর্মী এ কারখানার বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন। তবে শুক্রবার কারখানা বন্ধ ছিল।

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, সংরক্ষিত আসনের এমপি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম এবং পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন।

জেলা প্রশাসক জানান, মিনিস্টার কারখানায় আগুনের কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।