প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাবে ২ হাজার টাকা: গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

আগামী বছর থেকে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেসের জন্য দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।  

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 02:58 PM
Updated : 7 Sept 2019, 03:38 PM

কুড়িগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় শনিবার জাকির হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার মেধাবী জাতি গঠনে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

“তাই আগামী বছরের শুরুর দিন দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বইয়ের পাশাপাশি স্কুল ড্রেসের জন্য দেওয়া হবে দুই হাজার টাকা।”

বিদ্যালয়গুলোকে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে ক্লাস রুম। আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান নিশ্চিত করতে সরকারের এতসব আয়োজন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

কাজেই সরকারের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত কল্পে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে যারা দুর্নীতি করছেন তারা কেউ মাফ পাবেন না। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

এ সময় তিনি দুর্নীতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

মন্ত্রী বিকাল ৩টায় কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চতকরণে পরীক্ষামূলকভাবে এক শিফটের বিদ্যালয়ের সময়সূচির (ক্লাস রুটিন) উদ্বোধন করেন।

এই সূচি অনুযায়ী, এই বিদ্যালয়ে এখন থেকে সকাল ৯টা ৩০মিনিটে শরীরচর্চা ও ১০টায় ক্লাস শুরু হবে। ৪৫ মিনিট ক্লাস করার পর ১৫ মিনিট বিরতি। এ সময় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে পড়াবেন। আর ছুটি হবে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে।

জাকির হোসেন বলেন, আনন্দপূর্ণ পাঠদান কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক চারটি স্কুল বাছাই করা হয়েছে। স্কুলগুলো হলো- কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রৌমারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেত্রকোনার ৩৬ নম্বর বালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাগুরা জেলার হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সফলতা পেলে সকল বিদ্যালয়ে একই সময়সূচি চালু করা হবে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা ৩০ মিনিটের বিশ্রামের সময় পাবেন। প্রতি ক্লাসের শেষে ১৫ মিনিটের বিশ্রামের সময়ে খেলার ছলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে বলে তিনি জানান।

মন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয় শোক দিবস (১৫ অগাস্ট) পালনের জন্য সরকার এই প্রথম সকল বিদ্যালয়কে অনুষ্ঠানবাবদ দুই হাজার টাকা দিয়েছে। আগামী বছর থেকে এ টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে পাঁচ হাজার টাকা করা হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলপ্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ারও প্রক্রিয়া চলছে বলেও তিনি জানান।

পিডিইপি প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩ ও ৬ ক্লাস রুমের স্কুলগুলোকে পর্যাক্রমে ৯ ক্লাস রুমের স্কুলে পরিণত করা হবে।

জাকির হোসেন বলেন,  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। এরপর ২৮ বছর প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে একসঙ্গে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে।

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত এই মতবিনিময় সভা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিমন্ত্রী।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বদরুল হাসান বাবুল, রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক আব্দুল ওহাব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব নীলু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, তৌফিকুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, লস্কর আলী প্রমুখ।

সভায় জেলার সকল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা ইন্সট্রাক্টর, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারসহ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সকল কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর মন্ত্রী রাজারহাট চাকিরপশার তালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এখানে রাজারহাট উপজেলাকে শতভাগ স্কাউট উপজেলা ঘোষণা করা হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে উদ্বোধন করা হয় বাতিঘর প্রোগ্রাম।