বর্ষায় সবজি দিচ্ছে ভাসমান কৃষি

গোপালগঞ্জে কচুরিপানার উপর ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; এ পদ্ধতিতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি লাভবান হচ্ছে কৃষক।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2019, 08:08 AM
Updated : 6 Sept 2019, 08:08 AM

গোপালগঞ্জের পাশাপাশি মাদারীপুর, ফরিদপুর, বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, খুলনা, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী জেলাতেও ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।

বর্ষা মৌসুমে নিম্নঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা বেকার হয়ে পড়েন। সাধারণত ওই সময় জলমগ্ন জমিতে একটু জায়গাও অনাবাদি না রেখে কচুরিপানা জড়ো করে পানির ওপর ভাসমান বেড তৈরি করে সেখানে সবজি ও মসলা উৎপাদন করা হয়।

এ পদ্ধতিতে ভাসমান বেডের ওপর মাচা বেঁধে কৃষক লতা জাতীয় সবজির আবাদ করছেন। এসব বেডে লাউ, চালকুমডা, মিষ্টিকুমড়া, চিচিংগা, করলা, শশা, ঝিঙ্গা, ঢ্যাঁড়স, পুঁইশাক ও লাল শাকের চাষ করা হয়।

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক অবণী  বিশ্বাস (৬০) বলেন, তাদের পূর্ব পুরুষরা এ পদ্ধতিতে একশ বছর আগে থেকেই সবজি উৎপাদন করে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় তারাও এ চাষাবাদ চালিয়ে যাছেন।

কিন্তু পানির স্রোতে বেড ভেঙে যাওয়া, লতা জাতীয় ফসল আবাদে সমস্যাসহ বেশ কিছু সমস্যা ছিল এ পদ্ধতির চাষাবাদে। এ কারণে ভাসমান সবজি আবাদে লাভ তুলনামূলকভাবে কম হত।

পরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে বেডের আকার আকৃতিতে পরিবর্তন আনেন তারা। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে বেড তৈরি করে লতা জাতীয় সবজির আবাদ করা হচ্ছে। ভাসমান বেডে সবজি চাষে সাফল্যের পাশাপাশি আগের তুলনায় অনেক বেশি লাভ থাকছে বলে জানান অবণী। 

একই গ্রামের কৃষক শক্তি কীর্ত্তনীয়া (৬৫) বলেন, “গত দুই বছর ধরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতা ও পরামর্শে ভাসমান বেডে সবজি এবং মসলার আবাদ করে আমরা আগের তুলনায় আরও অনেক বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারছি।”

কৃষিগবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম এম কামরুজ্জামান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ করে গোপালগঞ্জের কৃষক সফল হয়েছে। পাশাপাশি এ গবেষণাতেও সাফল্য আসছে।

ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, দেশের ১৩ জেলার ২৫ উপজেলায় এ প্রকল্প শুরু হয়েছে।

“এর মাধ্যমে আমরা সবজি ও মসলার উৎপাদন বৃদ্ধি করছি। এতে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশ এ প্রকল্প নিয়ে যাওয়া হবে।”

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রচুর পানি ও কচুরিপানা রয়েছে। এ কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করে কৃষক আনেক আগে থেকেই সবজি উৎপাদন করে আসছে।

“এ চাষাবাদকে আমরা আধুনিক ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। বেডের সাইজ নির্ধারণ করে দিয়েছি। পাশাপাশি এ পদ্ধতিতে কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কিনা, তা নিয়েও গবেষণা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখে এ পদ্ধতিকে আধুনিক করার চেষ্টা করছি। বর্ষা মৌসুমে সবজির সংকট থাকে। এ পদ্ধতি সম্প্রসারিত করতে পারলে সবজির সংকট থাকবে না।”