ধর্ষণের অভিযোগের পর এসআই প্রত্যাহার, অথচ মামলায় নাম নেই

মাদকের মামলায় আটক স্বামীকে জামিন পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে এক নারীর কাছে টাকা দাবি করে না পেয়ে তাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে যশোরের শার্শা থানার এক এসআইসহ চার জনের বিরুদ্ধে।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2019, 09:19 AM
Updated : 4 Sept 2019, 09:19 AM

এ অভিযোগ ওঠার পর যশোর জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ শার্শা থানার এসআই খাইরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে নিলেও তাকে মামলায় আসামি করা হয়নি।

মঙ্গলবার সকালে যশোর সদরে হাসপাতালে ওই নারীর কাছ থেকেই ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে পারেন। হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সুপার ওই নারীর অভিযোগ শুনে শার্শা থানার ওসিকে তদন্ত করতে বলেন।

এর পর রাতে শার্শা থানায় এসআই খাইরুলের নাম বাদ দিয়ে অজ্ঞাতনামা একজনসহ চারজনকে আসামি করে মামলা নথিভুক্ত করা হয়।

ওসি মশিউর রহমানের ভাষ্য, এসআই খাইরুলকে থানায় ওই নারীর মুখোমুখি করা হলেও তিনি তাকে শনাক্ত করতে পারেননি। একারণে তার নাম মামলায় রাখা হয়নি।

মঙ্গলবার সকালে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, নয় দিন আগে রাত ১১টার দিকে এসআই খাইরুল তার স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আটক করে নিয়ে যান। পরদিন সকালে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামীকে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সোমবার রাত আড়াইটার দিকে এসআই খায়রুলসহ চারজন তার বাড়িতে এসে ডেকে দরজা খুলতে বলেন। তিনি খাইরুলের সঙ্গে তার গ্রামের দুই ব্যক্তিকে দেখে দরজা খোলেন। খায়রুল ও তার গ্রামের কামারুল ঘরে ঢোকেন।

ওই নারীর অভিযোগ, সহজে তার স্বামীর জামিনের প্রস্তাব দিয়ে বিনিময়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন খায়রুল। তিনি রাজি না হলে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে খায়রুল ও কামারুল তাকে ধর্ষণ করেন। এসময় তার গ্রামের লতিফ ও কাদের বাইরে দাড়িয়ে ছিলেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে এসে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে অভিযোগ করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুরোধ জানান।

তার সঙ্গে পুলিশ না থাকায় অপারগতা প্রকাশের পরও তিনি বারবার একই অনুরোধ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি মুনিরুউজ্জামনকে বিষয়টি জানালে তিনি গিয়ে ওই নারীকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যান।

শার্শা থানার ওসি মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেখানে এসআই খায়রুলকে ওই নারীর সামনে হাজির করা হলে তিনি বলেন, ওই রাতে যারা তার বাড়িতে গিয়েছিল তাদের মধ্যে এই ব্যক্তি ছিল না। তবে যারা ছিল তারা বারবার একজনকে দারোগা খাইরুল নামে ডাকছিল।

ঘটনাটির পেছনে কেউ ইন্ধন যোগাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মামলার এজাহারে এসআই কামরুলের নাম রাখা হয়নি। তবে অজ্ঞাতনামা আরেকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর মঙ্গলবার রাতেই কামারুল, লতিফ ও কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পরে পুলিশ সুপার মঈনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ওই নারীর কাছ থেকে তিনি অভিযোগ শুনেছেন। বিষয়টি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শার্শা থানায়। সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরে ওই নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবার যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তার শরীরের আঁচরের চিহ্ন দেখা গেছে।    

তবে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই খায়রুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই নারীর স্বামীকে আটক করেছি, তবে সোমবার রাতে তার বাড়িতে যাইনি। কামারুল নামে কাউকেও চিনি না।”

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এসআই খাইরুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বুধবার সকালে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ্ উদ্দিন শিকদার জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, খায়রুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তাকে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে যুক্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।