যশোরে স্ত্রী হত্যার দুই মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড

যশোরে স্ত্রী হত্যার দুটি মামলায় দুই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2019, 03:54 PM
Updated : 29 August 2019, 03:58 PM

বৃহস্পতিবার যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) টিএম মুছা এ রায় দিয়েছেন।

দণ্ডিতরা হলেন সদর উপজেলার আগ্রাইল গ্রামের কওছার মোল্যার ছেলে জাহিদুল ইসলাম ও কেশবপুর উপজেলার মনোহরনগর গ্রামের মৃত আতশ গাজীর ছেলে মমিন গাজী। তারা দুইজনই পলাতক।

সদর উপজেলার ঘটনায় মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে বাঘারপাড়া উপজেলার কটুরাকান্দি গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে কওছার মোল্যার ছেলে জাহিদুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে জাহিদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা তাসলিমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এক বছর পর তাসলিমার মা জাহানারা খাতুন জামাই জাহিদুলকে ১১ হাজার টাকা দেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০০১ সালের ২৯ অগাস্ট জাহানারা বেগম জামাই বাড়ি বেড়াতে যান। ওইদিন রাত ৯টার দিকে জাহিদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ফের টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে তারা অস্বীকার করায় তাসলিমাকে মারপিট শুরু করে। এ সময় তাসলিমার মা ঠেকাতে গেলে তাকেও মারপিট করে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তাসলিমার মৃত্যু হয়।

অভিযোগে বলা হয়, হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গাছের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালায় তারা। ফলে প্রথমে ৩০ অগাস্ট কোতোয়ালি থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে থানা পুলিশ। কিন্ত বাদী লাশের ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট হাতে পেয়ে জানতে পারেন তাসলিমার মৃত্যু হয়েছে আঘাতের কারণে।

এরপর ২০০২ সালের ১১ জুলাই তাসলিমার মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে জামাই জাহিদুল ইসলাম, তার বাবা কওছার মোল্যা, ভাই মহিদুল ইসলাম ও জামির হোসেন এবং মহিদুলের স্ত্রী আমেনা খাতুনের নামে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।

আদালতের নির্দেশে থানা পুলিশ ২০০৪ সালের ১৪ জুলাই নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।

প্রথমে এসআই শফিকুল ইসলাম এবং পরে এসআই সোহরাব হোসেন মামলাটি তদন্ত করে পাঁচজনের নামে অভিযোগপত্র দেন।

রায়ে জাহিদুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। এ মামলার অপর চার আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি এম ইদ্রিস আলী এবং আসামি পক্ষে অঞ্জনা রানী ধর ও শামসুর রহমান।

অপর ঘটনাটি ঘটেছে কেশবপুর উপজেলায়।

এ মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে উপজেলার বেতিখোলা গ্রামের মোবারক সরদারের মেয়ে মনোয়ারা খাতুনকে মনোহরনগর-পাথরঘাটা গ্রামের মৃত আতশ গাজীর ছেলে মমিন গাজী বিয়ে করে। বিয়ের সময় মমিন গাজী শ্বশুরের কাছে ৪০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। ওই সময়ে ২০ হাজার টাকা, ঘড়ি, বাইসাইকেল, স্বর্ণালংকার, গরু ও ছাগল দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি থাকা যৌতুকের ২০ হাজার টাকার জন্য মনোয়ারার উপর নির্যাতন চালায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

অভিযোগ করা হয়, ২০০৬ সালের ২০ মে সকাল ৯টার দিকে স্বামী মমিন গাজী ও তার মা জবেদা খাতুন শাবল দিয়ে মনোয়ারাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এতে ঘটনাস্থলে মনোয়ারার মৃত্যু হয়।

কিন্তু থানায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। এরপর মনোয়ারার ভাই তকবার আলী বাদী হয়ে যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুক দাবিতে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন।

আদালতের নির্দেশে একই বছরের ১৪ জুন নিয়মিত হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে থানা পুলিশ।

কেশবপুর থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম তদন্ত শেষে মমিন গাজী ও তার মায়ের বিরুদ্ধে যশোর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মমিন গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং তার মা জবেদা খাতুনকে বেকসুর খালাসের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন বিশেষ পিপি এম ইদ্রিস আলী এবং আসামিপক্ষে আবু নাসের মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।