এদিকে, বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
সুজানগর উপজেলায় সাতবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত মিনার ভেঙে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বাবার মুর্যাল নির্মাণের বিষয়ে রোববার সংবাদ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ নেয়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের অর্থায়নে এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে জায়গা নির্ধারণ করে কলেজ পরিচালনা কমিটি মুর্যাল নির্মাণের কাজ করছিল বলে সাতবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক জানিয়েছিলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, “এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার অভাবেই এমনটি হয়েছে। তারা আরও সতর্ক হয়ে কাজটি করতে পারতেন। যাই হোক আগে শহীদ মিনারটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইতিমধ্যেই আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মুর্যাল তৈরির কাজ বন্ধ এবং আগে শহীদ মিনার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছি।”
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষ পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোহম্মদ আব্দুল বাছেত বাচ্চু লিখিত বক্তব্য দেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “তৎকালীন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের (বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক) কথামতো সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে শহীদ মিনার ভাঙা হয়েছে। কলেজের শহীদ মিনারটি বাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ জনসাধারণ শহীদ মিনারের গা ঘেষে মলমূত্র ত্যাগ ও আবর্জনা ফেলায় শহীদ মিনারটির প্রবিত্রতা নষ্ট হতো। তাই ভাঙ্গা হয়েছে।”
এছাড়া ব্যক্তি বিশেষের মুর্যাল কলেজ ক্যম্পাসে কেন এবং তারা স্থান ক্রয় সাপেক্ষে মুর্যাল তৈরি করছেন কিনা প্রশ্ন করা হলেও তার কোনো জবাব দেননি তিনি।
এক পর্যায়ে তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের তোপে পরে সংবাদ সম্মেলন দ্রুত শেষ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুজানগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য সামছুল হক, আহম্মদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে আহম্মেদ ফারুক কবীর বাবু, আহসান হাবিব, কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিৎ দেবনাথের নির্দেশে শহীদ মিনারটি ভাঙার কথা বলা হলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
সুজিৎ দেবনাথ বলেন, “কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি সবই জানেন। আর এমপি স্যার যা বলবেন আমাকে তাই করতে হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।”
ইউএনও আরও বলেন, “আমরা অর্থায়ন করছি ঠিকই, তবে স্থান নির্ধারণ, ডিজাইন থেকে শুরু করে সব কাজই তারা নিজেদের মতো করে করেছেন এমপি স্যারের নাম ব্যবহার করে। অথচ প্রথম দিনে সাংবাদিকদের তিনি অস্বীকার করেছেন যে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না, এখন আবার আমাদের কথা বলছেন।”
এদিকে, সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রতি বিষোদগার করে প্রতিবাদ সভা করেছে কিছু লোক।
মঙ্গলবার কলেজ চত্বরে সচেতন সমাজের ব্যানারে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা প্রকাশিত সংবাদটিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।