ক্লিনিকের ফটক খোলেনি, সড়কে সন্তান ভূমিষ্ঠ

গভীর রাতে সন্তানসম্ভবা এক নারীর স্বজনদের ডাকে ক্লিনিকের ফটক না খোলায় সড়কে তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2019, 12:13 PM
Updated : 21 August 2019, 02:14 PM

সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় গোপালগঞ্জ শহরের ঘুল্লিবাড়ি মোড়ে ‘মালঞ্চ ক্লিনিকের’ ফটকের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।

পরে শহরের আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতক ও মাকে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুজনই এখন সুস্থ আছে।

প্রসূতি রোজিনা বেগম (৩২) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের নিয়ামূল শেখের স্ত্রী।

রোজিনার শাশুড়ি বিনা বেগম (৬০) সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার  রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামের বাড়িতে রোজিনার প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে প্রথমে শহরের নার্গিস ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক না থাকায় মালঞ্চ ক্লিনিকে নেওয়ার পরামর্শ দেয় তারা।

“মালঞ্চ ক্লিনিকে পৌঁছার পর রোজিনা প্রসব বেদনায় ছটফট শুরু করে। আমরা মালঞ্চ ক্লিনিকের গেট খুলতে অনুরোধ করি। পরে আমরা গেটে ধাক্কাধাক্কি করি। আমাদের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে আশপাশের লোজন ছুটে আসেন।

“কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের মন গলেনি। তারা গেট খোলেনি। চিকিৎসা দেয়নি। আমাদের সাথে অমানবিক অচরণ করেছে। ক্লিনিকের নার্স ইতি রানী রোগী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এতে আমরা খুবই অবাক হয়েছি।”

ঘুল্লিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা লিমন (২০) বলেন, “ক্লিনিক গেটে চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে আমি আমাদের বিল্ডিং এর ছাদে যাই। সেখান থেকে দেখি প্রসূতিকে নিয়ে স্বজনরা বিপাকে পড়েছে। পরে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। আমার দেখাদেখি আরও অনেকে এগিয়ে আসেন।”

একই এলাকার গৃহবধূ তুরানী সুলতানা (৩৫) বলেন, “প্রসূতির আর্তচিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি ক্লিনিক গেটের সামনের রাস্তায় গৃহবধূ বাচ্চা প্রসব করেছে। পরে কাপড় দিয়ে সদ্যজাত শিশু ও মাকে আড়াল করি। তারপর শিশুর নারী কেটে দেই। এ ছাড়া প্রসূতিকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করি।

“প্রসূতি ও তার স্বজনদের চিৎকারে আমরা উঠে এসেছি। কিন্তু ক্লিনিকের মালিক ডা. অনুপ কুমার মজুমদার তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তার নার্সসহ ক্লিনিকে কর্মরতরা এগিয়ে আসেনি। এ দায় তারা এড়াতে পারে না।”

এই এলাকার আরেক গৃহবধূ তহমিনা (২৫) এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাচ্চা প্রসব করার পর রোগী ও তার স্বজনরা ক্লিনিকের সামনের রাস্তার উপর প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করেন। এ সময়েও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকের গেট না খুলে রোগীর সঙ্গে অমানবিক অচরণ করেছে।

“পরে আমরা প্রসূতি ও তার বাচ্চাকে শহরের বটতলার হামিদা ক্লিনিকে ভর্তি করি।”

এ ব্যাপারে কথা বলতে মালঞ্চ ক্লিনিকে গিয়ে নার্স ইতি রানীর কাছে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বুধবার দুপুরে তিনি ডিউটিতে ছিলেন না।

হামিদা ক্লিনিকের মালিক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, রাস্তায় বাচ্চা প্রসবের পর প্রসূতি ও সদ্যজাত শিশু গভীর রাতে আমার ক্লিনিকে আসে। তাদের আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদান করি। ভর্তির সময় মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ ছিল। তাই তারা মঙ্গলবার সকালেই হামিদা ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফিরে গেছে।

ক্লিনিকের মালিক ডা. অনুপ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার সময় আমি ঘুমে ছিলাম। এ বিষয়টি আমি জানতে পারিনি। পরে জেনেছি প্রসূতি এক মহিলা শেষ মুহূর্তের প্রসব বেদনা নিয়ে আমার ক্লিনিকের সামনে এসেছিল। তার স্বজনরা আমাদের ডাকাডাকি করেছিল; কিন্তু আমরা তাতে সাড়া দিতে পারিনি। এক পর্যায়ে ওই মহিলা সেখানে বাচ্চা প্রসব করে এবং পরে চলে যায়। আমি এটুকুই জানি।”

ডা. অনুপ আরও বলেন, ‘ক্লিনিকে ইমারজেন্সি সার্ভিস দেওয়া হয় না। ইমারজেন্সি সার্ভিস দেওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। তাই ক্লিনিক ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ক্লিনিকে ভর্তি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য ২৪ ঘন্টা ক্লিনিকে চিকিৎসক থাকেন। “আমাদের ক্লিনিকে আমি নিজেই সেই সেবা দেই। প্রসূতিকে কেন সেবা দেয়া হলো না ? এমন প্রশ্ন তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সেখানে সন্তান প্রসবের কিছু সময় পরই রোগীও তার স্বজনরা ক্লিনিকের সামনে থেকে চলে যান।’

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. তরুণ মন্ডল বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধি মোতাবেক ক্লিনিকে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হবে। এ অঙ্গীকার করেই ক্লিনিকের মালিক বা কোম্পানি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন নিয়েছেন। তারপরই তারা ক্লিনিক বা প্রাভেট হাসপাতাল করেছে। তাই তাদের ২৪ ঘন্টার কম সেবা দেয়ার সুযোগ নেই।

“সাংবাদিকদের  কাছ থেকে শুনেছি সোমবার গভীর রাতে ক্লিনিকে সেবা নিতে এক প্রসূতি আসেন। অনেক ডাকাডাকি করার পরও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকের গেট খোলেনি।  ক্লিনিকের সামনের রাস্তায় প্রসূতি বাচ্চা প্রসব করেছে।”

এতে প্রসূতি বা শিশুর মৃত্যু ঝঁকি থাকতে পারো। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেই অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ করলে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে সিভিল সার্জন জানান।