পাকুন্দিয়া উপজেলা এলজিইডির সাবেক প্রকৌশলী মুহাম্মদ বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু।
তবে প্রকৌশলী মুহাম্মদ বাচ্চু মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে এটি তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী উপজেলা চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করছেন।
বাচ্চু মিয়া সম্প্রতি জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ময়মনসিংহ জেলা এলজিইডি অফিসে বদলি হয়েছেন।
চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তার লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, প্রাথমিক শিক্ষা অদিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছেন।
এ ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কাগজে ওই প্রতিষ্ঠানে ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে ওই কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারকে ১৭ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে এ উপজেলার আরও নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণের কাজে এ প্রকৌশলী আগাম বিল দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন রফিকুল।
মেহেরধনবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঠিকাদার গত জুন থেকে ১৯ অগাস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত (তিন মাসে) ওই স্কুলের মূল ভবনের জন্য ১৪টি বেজ (১৫ ইঞ্চি উচ্চতার এবং ৭ বর্গফুট ক্ষেত্রফলের) এবং বারান্দার জন্য ৭টি বেজ (১২ ইঞ্চি উচ্চতার এবং ৭ বর্গফুট ক্ষেত্রফলের) ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছে। আর এসব বেজ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেন গেল ঈদের দুইদিন আগে।
অথচ প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া ওই ভবনের ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে ২৮ জুন ওই কাজের ঠিকাদারকে ১৭ লাখ টাকা আগাম বরাদ্দ দিয়েছেন, বলেন মেসার্স নাদিয়া এন্টারপ্রাইজের কাজ পরিচালনাকারী মো. মজলিশ।
চণ্ডিপাশা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একই সময়ে একই আকার-আকৃতির স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ২০ ভাগ। গত তিন মাসে তারা ওই স্কুলের ভবনের শুধু ২১টি বেজ ঢালাই দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার। আর বেজ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেন ২০ জুন এবং বেস ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেন অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে।
এ কাজের ঠিকাদার কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে তারা বেজ ঢালাই কাজের পর পিলার নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
“অথচ প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া ওই ভবনের ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে জুন মাসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন এবং ওই কাজের ঠিকাদারকে ২৫ লাখ টাকা আগাম দিয়েছেন। বাস্তবে কাজের পরিমাণ অনেক কম।”
রফিকুল বলেন, “সম্প্রতি এ বিষয়ে অভিযোগ হওয়ার পর এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর তড়িঘড়ি করে ওইসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারেরা। এতে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”
প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগাম বিল পরিশোধের বিধান নেই। আমি কাউকেই আগাম বিল পরিশোধ করিনি। কিছু কাজ করার পরই ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেছি। এখন দেখার বিষয় হলো টাকাটা মিসইউজ হয়ে কিনা।”
তিনি আরও বলেন, “বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই উপজেলা শিক্ষা অফিসে বিনা টেন্ডারে (আরএফকিউ) সংস্কার কাজ ও আসবাবপত্র ক্রয় করেছি।
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের নিয়ম নেই। প্রকৌশলী বাচ্চুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অনীল চন্দ্র বর্মনকে প্রধান করে দুই সদস্যের এক তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।