গত কয়েক বছরের কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকা ট্যানারি মালিকরা এখনও পরিশোধ করেনি। এবারও চামড়া কিনে তারা নতুন করে শঙ্কায় রয়েছেন।
শেরপুরের চামড়া ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা পাওনা আছে। দীর্ঘদিনেও পাওনা টাকা না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরকার গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও ফড়িয়াদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের অনেকেই সরকার নির্ধারিত দামে আবার কিছু ব্যবসায়ী তার চেয়ে বেশি দরে কিনেছেন। লবণ দিয়ে এবং শ্রমিকের বেতন দিয়ে চাড়ার ক্রয়মূল্য পড়েছে আরও বেশি।
ঈদের একদিন পর মঙ্গলবার শেরপুর শহরের কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির।
“অহন বর্তমানে ঢাকা যাইয়া সাতদিন আছিলাম। সাতদিন থাকার পরও একটি টাকাও পাইছি না। অহন নগদ হোক, বাকি হোক, সুদি কইরা নিয়াই আর ধার কইরা নিয়াই কোনো রহম কিনছি কিন্তু। সরকারে রেট দিছে, রেট অনুয়ায়ী কিনছি আমরা। কথা বুঝছেন। অহনা আমগরে চলার মতো কোনো পথ নাই। আমরা অসহায়।” সরকারের প্রতি কিছু করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই চামড়া যে বর্তমানে আশার ওপর কিনলাম, কিনা পরে কী হবে না হবে, কিকরমু কোথায় দিমু তাও জানি না।”
সরকার তাদের জন্য কিছু করছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কোম্পানিগুলা লাখ লাখ টাকা আত্মসাত কইরা বইয়া রইছে। আমগরে টাকা দেয় না। আমরা কী দিয়া কী করব?”
শেরপুর শহরের খরমপুরের চামড়া ব্যবসায়ী সুরেশ চন্দ্র দাস বেপারী বলেন, “আমরা যে ব্যবসা করতাছি এইডা। করা না করা সমান কথা অইয়া গেছে গা। কোম্পানিরা আমগরে সর্বস্বান্ত কইরা ফালাইছে। কোম্পানির কাছে টেকা পামু। কিছু কিছু কেম্পানি ফ্যাক্টরির তালা মাইরা পলাইছে। আবারও মনে করুন যার কাছে ২০ লাখ ৩০ লাখ টেকা পামু এগুলা কোম্পানি ৫ পার্সেন্ট টেকা দিছে।
“মার্কেটে মানুষ যে আমাদের কাছে টেকা পাবো এই টাকা দিমু কীভাবে? অহন মাতা (মাথা) আমগরে ঠিক নাই। কী করমু, না করমু।”
একই এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, “চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাইতেছে না। কোম্পানিরা তিন/চার বছর ধরে টাকা আটকাইয় রাখছে। এই টাকা দিচ্ছে না। যার জন্যে আমরা চামড়া কিনতে পারতাছি না। তারপরও ধার-দেনা করে ঝুঁকি নিয়ে চামড়া কিনতে হয়েছে আমাদের। সরকারি রেটেই চামড়া কেনা হয়েছে। এই চামড়া কোথায় এবং কীভাবে বিক্রি হবে বলতে পারতাছি না।”
তিনি বলেন, “কোম্পানিগুলোর কাছে শেরপুরের চামড়া ব্যবসায়ীদের ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এবার তিন থেকে চার হাজার কাঁচা চামড়া কেনা হয়েছে। সরকার আমাদের দেখছে না। ফলে আমাদের ব্যবসা খুবই সংকটের মধ্যে আছে।”
একই এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, “আট/নয়শ চমড়া কিনছি রিকসের ওপরে। চামড়ার কোম্পানিগুলা এইগুলা নিব কিনা জানি না। জাতীয় স্বার্থে কেনা হইছে। কোম্পানীরা টেকা দেয় নাই আমাদের।”