যমুনার ভাঙনে সর্বস্বান্ত, ঈদ ‘হবে না’ তাদের 

যমুনার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হওয়া বগুড়ার ধুনট উপজেলার বৈশাখী, রাধানগর, বথুয়ার ভিটা গ্রামে কেউ এবার কোরবানির ঈদ ‘করছে না’।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2019, 05:54 PM
Updated : 11 August 2019, 06:06 PM

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার লোকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা জানান।

ধুনট উপজেলার ভাঙাবাড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন এই তিনটি গ্রাম বিভিন্ন সময় ভাঙনের কবলে পড়লেও নানাজনের সহায়তায় এলাকার দরিদ্র লোকজন ঈদ উদযাপন করেছেন। কিন্তু এবার কেউ সহায়তা না করায় তারা কোরবানির ঈদ করতে পারছেন না।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় বৈশাখী, রাধানগর, বথুয়ার ভিটা গ্রামে বিত্তশালী ও শিক্ষিত মানুষের বাস ছিল। ১৯৮২ সালে যমুনার ভাঙনের পর যে যার মতো শহরে চলে যায়৷ এলাকায় থেকে যায় দরিদ্র লোকজন। কেউ যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে, আবার কেউ আমপাশ এলাকায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

২০০৩ সালে আবার জেগে ওঠে বৈশাখী, রাধানগর ও বথুয়ার ভিটা গ্রাম। এরপর গ্রামের আদি বাসিন্দারা গ্রামে ফিরতে শুরু করে। বসতি গড়ে আবার চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু সচ্ছল ব্যক্তিরা শহরেই থেকে যায়।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের বন্যায় আবার যমুনার ভাঙনে রাধানগর সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। বৈশাখী ও বথুয়ার ভিটার কিছুটা অংশ টিকে আছে। আশ্রয়হীনরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কিংবা অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছে।

বৈশাখী গ্রামের সঞ্জু মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্যা হলে আগে কোরবানির ব্যবস্থা করতেন বৈশাখী গ্রামের ডা. নাজমুল কাদির ও তৌহিদুর রহমান। ২০১৭ সালের বন্যার পর কোরবানির ব্যবস্হা করেছিলেন বগুড়ার তৎকালীন পুশিশ সুপার, বর্তমান অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা) মো. আসাদুজ্জামান। সহযোগিতা করেছিলেন একজন সাংবাদিক ও এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান, যুবলীগ নেতা আব্দুস সালাম। 

একই গ্রামের সাহজাহান সরকার বলেন, এবার কেউ কোরবানির ব্যবস্হা করেনি। ভাঙনের পর কে কোথায় গেছে ঠিক নেই। তবুও যারা আছে তাদের জন্য এখনও কেউ এগিয়ে এল না।

ওই গ্রামের নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার পারভেজ রুবন বলেন, তিনটি গ্রামের জেগে ওঠা চরে প্রায় দেড় হাজার মানুষের বসবাস ছিল।

“আমাদের আত্মীয়রা কোরবানিসহ অন্যান্য উৎসবে সহযোগিতা দিত। এবার তা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যালয়টিও যমুনা গর্ভে চলে গেছে।” 

রাধানগরের মকবুল হোসেন, মোহাম্মদ মন্ডল বলেন, নদী ভাঙনে তারা বাধে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজের সামর্থ্যও নেই কোরবানির।

ভাঙাবাড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শিমুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্য সময় নানাভাবে সহায়তায় তারা কোরবানির ঈদ করলেও এবার করতে পারছে না। কেউ এবার সহায়তা করেনি।

স্থানীয় নারী ওয়ার্ড সদস্য শেফালী খাতুন মলি বলেন, এই তিন গ্রামের কেউ কোরবানি দিচ্ছে না। তিনি নিজেও দিচ্ছেন না।