ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

নোয়াখালী প্রতিনিধিময়মনসিংহ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2019, 07:28 AM
Updated : 11 August 2019, 03:18 PM

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভার্তি হওয়া নতুন রোগীর সংখ্যা কমে এলেও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. রিফাত হোসেন ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জোবায়ের আলম জানান। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ডেঙ্গু ধরা পড়ায় রিফাত তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে দুই দিন আগে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

জোবায়ের বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি, এখন যতটুকু তাদের সাহায্য করা যায়।"    

এর আগে গত ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ফিরোজ কবির ডেঙ্গুতে ভুগে মারা যান। 

রোববার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্য ঘটনা দুটো ঘটেছে ময়মনসিংহ ও নোয়াখালীতে।

নোয়াখালীর সদর হাসপাতালে ভোর সোয়া ৬টার দিকে আমির হোসেন (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান।

আমিরের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার দত্তপাড়া এলাকায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন। ঢাকায় থাকা অবস্থায় এক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গু ধরা পড়লে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান বলে জানান ডা. মহিউদ্দিন।

বাড়ি যাওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে শনিবার আমিরকে পাশের জেলা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। তখন তার জ্বরের সঙ্গে পেটব্যথা ও ডায়রিয়া ছিল।

শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে শনিবার রাত ১টার দিকে আমিরকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

জেলর সিভিল সার্জন মো. মোমিনুর রহমান জানান, শনিবার পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ২৪১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৬ জন। কেবল নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালেই ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বেলা ১১টার দিকে ফরহাদ হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।

ফরহাদ কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের ফেরদৌস আলীর ছেলে। তিনি ইটনা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, “ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ফরহাদ শুক্রবার রাতে হাসপাতোলে ভর্তি হন। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় দ্রুত তার মৃত্যু হয়।”

ময়মনসিংহ মেডিকেলে বর্তমানে ২০১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ৭১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অ্যান্ড অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; এর মধ্যে চলতি অগাস্ট মাসের প্রথম নয় দিনেই ২২ হাজার ৭১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সরকার ডেঙ্গুতে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও সংবাদমাধ্যমে আসা সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে যে তথ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পেয়েছে, তাতে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১৫ জনের।

এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কিশোরগঞ্জে ৭৬ জন ও রংপুরে ১১৩ রোগী ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।       

কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, জেলার হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে মোট চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে। সব মিলিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯৭ জনে। তাদের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায় থাকার সময়।

এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অন্তত ৭৬ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এ রোগে আক্রান্ত এক শিশু মারা গেছে বলে জানান তিনি।

কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া জানান, তার হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জন নতুন রোগী এসেছেন; সব মিলিয়ে ভর্তি আছেন ৭১ জন ডেঙ্গু রোগী।

বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক খালেকুল ইসলাম জানান, এ হাসপাতালে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ১২ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। মোট ৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বাকিরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

সিভিল সার্জন বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

রংপুর

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন বলে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম শাহাদুজ্জামান রোববার সকালে সাংবাদিকদের জানান।

“গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হওেয়ছেন। চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন ৩০ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিউতে ভর্তি আছেন আরও দুইজন।”

শাহাদুজ্জামান বলেন, ১৯ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত তিনশ ১২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন একশ ৯৯ জন। এর মধ্যে গত ৬ অগাস্ট এ রোগে আক্রান্ত তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়।

[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও রংপুর প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে।]