স্ত্রী-সন্তানকে স্বীকৃতি দিয়ে ১৪ বছর পর জামিনে মুক্ত

স্ত্রী-সন্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্তে ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি ১৪ বছর জেল খাটার পর যশোর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

শিকদার খালিদ যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2019, 12:37 PM
Updated : 9 August 2019, 12:37 PM

যশোর কারাগারের জেলার আবু তালেব জানান, মোহাম্মদ ইসলাম নামে এই ব্যক্তি শুক্রবার দুপুরে যশোরের জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

ইসলাম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ মৃধার ছেলে।

তিনি কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তার বাবা, দুই বোন ও ভাই কারাফটকে ছিলেন। তবে তার সেই স্ত্রী মালা ও ছেলে মিলন উপস্থিত হননি।

ইসলামের বাবা আজিজ মৃধা বলেন, “তারা ঢাকায় রয়েছে। সেখান থেকে বাড়ি আসবে।”

মামলা সম্পর্কে জেলার তালেব বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৪ বছর ৬ মাস ২৯ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ইসলাম। তার সাজা হয়েছিল ৩০ বছরের। সন্তান ও স্ত্রীকে মেনে নেওয়ার শর্তে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছে। এর আগে যশোর কারাগারে তাদের ফের বিয়ে দেওয়া হয় গত ৩১ জুলাই।”

ঝিনাইদহ কারাগারে ইসলামের জামিন আদেশ পৌঁছালে সেখান থেকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয় বলে তিনি জানান।

ছেলেকে নিতে কারাফটকে আসা ইসলামের বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, ছেলেকে মুক্ত করতে পেরে তিনি অনেক খুশি। ইসলামের ছেলেকে তারা অনেক আগেই মেনে নিয়েছেন।

তিনি পুত্রবধূ মালার পরিবারকে দায়ী করে বলেন, “তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এত কিছু হত না।”

জামিনে কারামুক্ত ইসলাম বলেন, তিনি খুব খুশি। সন্তান-পরিবারসহ তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান।

বেলা আড়াইটার দিকে ইসলাম তার বাবা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে কারাফটক থেকে ঝিনাইদহে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।

রওনা হওয়ার আগে ইসলাম বলেন, ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেমের সম্পর্ক থেকে তাদের বিয়ে করে। কিন্তু ইসলাম তার স্ত্রীকে সাহস করে বাড়ি নিতে পারেননি। পরে তিনি পারিপার্শ্বিক চাপে স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় ২০০১ সালে ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন তার স্ত্রী। ডিএনএ টেস্টের পরও ইসলাম স্ত্রী-সন্তানকে মেনে না নেওয়ায় আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩০ বছরের সাজা দেয় ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি। আপিল করলে উচ্চ আদালত এই রায় বহাল রাখে। উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেখানেও সে রায় বহাল থাকে। পরে আপিল রিভিউ আবেদন করলে ইসলামের আইনজীবী স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক আদেশে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে কারাগারের ভেতরে ইসলাম ও মালাকে আবার বিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয়।

জেলার আবু তালেব বলেন, আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজন ও তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দেওয়ার পর তার জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়। এ বিষয়ে আগামী ২৯ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে প্রতিবেদন দিতে হবে জেল কর্তৃপক্ষকে। ইসলাম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শর্ত ভঙ্গ করলে আবার তাকে কারাগারে যেতে হবে।