নারায়ণগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম গ্রেপ্তার

‘ঝাড়ফুঁকের নামে’ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক মসজিদের এক ইমামের বিরুদ্ধে আট বছর বয়সী মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2019, 03:38 PM
Updated : 7 August 2019, 03:38 PM

ফজলুল রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের ওই ইমামসহ ছয়জনকে বুধবার গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

ফজলুল রহমান নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সরাপাড়ার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।

অপর পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই শিশুকে হত্যা ও অপহরণের চেষ্টায় ওই ইমামকে সহযোগিতা করার অভিযোগে।

গ্রেপ্তার সহযোগীরা হলেন রমজান আলী, গিয়াস উদ্দিন, হাবিব-এ-এলাহী ওরফে হবি, মোতাহার হোসেন ও শরিফ হোসেন।

বুধবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ওই সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) আলেপ উদ্দিন এবং সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

কাজী শমসের উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় বোরকা পরে এক ব্যক্তি র‌্যাব-১১ অফিসে এসে অভিযোগ দেন তার মেয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মেয়েকে মসজিদের এক ইমাম ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা তার মেয়েকে ও তাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে।

“পরে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে যায় র‌্যাবের সদস্যরা। সেখানে ধর্ষণের শিকার শিশু ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে দুই দিনের প্রচেষ্টায় বুধবার সকালে ওই ধর্ষক ইমাম ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

কাজী শমসের আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি বয়স ৮ বছর। সে মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শিশুটি রাতের বেলায় দুঃস্বপ্ন দেখে কান্নাকাটি করত। 

শমসের বলেন, বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি চিকিৎসা করে ভালো না হওয়ায় ওই শিশুর বাবা জানতে পারেন যে ইমাম ফজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়ফুঁক ও পানি পরা দেন। এরই প্রেক্ষিতে ওই শিশুর বাবা তার মেয়েকে এর আগে ২ থেকে ৩ বার ফজলুর রহমানের কাছে ঝাঁড়ফুক করিয়ে নেন। তারপরও তেমন উপকার না হওয়ায় ফজলুর রহমান ওই শিশুদের বাসায় গিয়ে ‘বাড়ি বন্দি’ নামের চিকিৎসা দিয়ে আসেন।

পরে ঘটনার আগের দিন মাগরিবের সময় ওই শিশুর বাবা ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে আসতে বললে তিনি পরদিন ফজরের আযানের পর মসজিদে যেতে বলেন। কথামতো মেয়েকে নিয়ে মসজিদে যান। পরে শিশুটি তার বাবার সঙ্গে মসজিদের ৩য় তলায় ইমামের শোয়ার ঘরে যায়, বলেন শমসের।

তিনি বলেন, এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে ওই শিশুর বাবাকে ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেন। ওই সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কোনোভাবেই মোমবাতি ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না। এর মধ্যে সময় ক্ষেপণ করার জন্য ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে একটি পান আনতে বলেন এবং মসজিদের মোয়াজ্জিনকে ফোন করে নিচের গেটে তালা মারতে বলেন। ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেন।

“এর মাঝে শিশুটির দুই হাত পিছনে বেঁধে এবং মুখে টেপ মেরে ধর্ষণ করেন এবং প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দেন।”

শিশুর বরাতে শমসের আরও বলেন, এরপর শিশুটির গলায় ছুরি ধরে তার বাবা-মাকে বললে জবাই করে ফেলার হুমকি দেন। শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তাড়াহুড়া করে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেন।

“এদিকে, শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বলে। এক পর্যায়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা মসজিদে গিয়ে বিচার দেন। তখন ইমামের কিছু ভক্ত সেখানেও শিশু ও পরিবারটিকে হেনস্থা করে।”

মেয়েটির বাবার বরাত দিয়ে শমসের বলেন, এরপর শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করার উদ্দেশ্যে কয়েক দফায় চেষ্টা চালায়।

হামলার ভয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে তার বাবা-মাকে দীর্ঘসময় হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্সের বোরকা পরে র‌্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ফজলুর রহমান র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে ফতুল্লা থানায় ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন।