নরসিংদীতে কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় এক কিশোরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2019, 12:27 PM
Updated : 5 August 2019, 03:05 PM

গত ২৫ জুলাই উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বললেও মামলা করা হয় শুক্রবার।

ঘটনাটি মীমাংসার কথা বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সময়ক্ষেপণ করেছেন বলে মেয়েটির (১৩) বাবার ভাষ্য।

এ ব্যাপারে বাঘাব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তরুণ মৃধার সঙ্গে কথা বলা না গেলেও স্থানীয় এক ওয়ার্ড সদস্য মীমাংসার উদ্যোগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পাঁচজনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন মেয়েটির বাবা।

আসামিরা হলেন বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন (৪৫), আক্তারুজ্জামানের ছেলে কাজল মিয়া (৫৫), বিরাজনগর গ্রামের মোতালেব মিয়ার ছেলে হযরত আলী (৪৫), রাজু মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া (৩৫) ও আবুল হোসেনের ছেলে মনির হোসেন (৩৫)।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২৫ জুলাই রাতে মেয়েটির বাবা এই মামলার বাদী গান শুনতে সৃষ্টিগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। রাত ৩টার দিকে বাদীর ছোটভাই তাকে ফোনে জানান যে কাজল (আসামি) তার মেয়েকে মেরে ফেলছে।

রাত সাড়ে ৪টার দিকে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বাদী জয়মঙ্গল গ্রামের জাকিরের (আসামি) বাড়ি গিয়ে তার মেয়েকে বিবস্ত্র, রক্তাক্ত ও অচেতন পড়ে থাকতে দেখেন বলে মামলায় বলা হয়।  

অভিযোগে আরও বলা হয়, অসুস্থ অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর সুস্থ হলে সে জানায় যে রাত ১১টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে জাকির, হযরত ও কাজল তার মুখ চেপে ধরে তুলে জয়মঙ্গল গ্রামে কাজল মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে পাঁচজন মিলে তাকে মুখ চেপে ধরে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।

রাত ৩টার দিকে তাকে একই গ্রামের জাকিরের বাড়ির রান্নাঘরে এনে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায় বলে মামলায় বলা হয়।

মামলার বাদী ও মেয়েটির বাবা বলেন, লোকলজ্জার ভয়ে ও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রথমে ঘটনাটি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লোক জানাজানি হয়ে যাওয়ায় কোনো কিছু ভেবে না পেয়ে ঘটনার দুইদিন পর স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ঘটনা খুলে বলেন।

“ইউপি চেয়ারম্যান তরুণ মৃধা আমাকে তখন বলেন- খুব দেরি হয়ে গেছে, এখন তো আর থানায় মামলাও নেবে না। আমিই বিষয়টি মীমাংসা করে দেব। পরে ৩১ জুলাই চেয়ারম্যান ফের বলেন তিনি আর মীমাংসা করতে পারবেন না। থানা বা কোর্টে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি।”

এই ব্যাপারে কথা বলতে বাঘাব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তরুণ মৃধার কাছে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার দুটি ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু সিদ্দিক বলেন, “আমরা ঘটনা জেনেছি গত সোমবার এলাকায় পুলিশ আসার পর। এই ঘটনায় আপস মীমাংসার কোনো চেষ্টা আমরা করিনি।”

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার চারদিন পর পুলিশ আসামিদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ আসামি সেলিমের বাড়ি গিয়ে তাকে না পেয়ে তার সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি থানায় নিয়ে যায়।

শিবপুর মডেল থানার ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, “এই ঘটনায় ওই মেয়ের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিদের সবাই পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।”

তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিকভাবে আপস মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি এমন চেষ্টা করে থাকেন তারাও অপরাধ করেছেন।