রেলওয়ে থানায় তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের অভিযোগে আদালতে তোলার পর এক তরুণী খুলনা রেলওয়ে থানার ওসি ও চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2019, 10:49 AM
Updated : 5 August 2019, 02:30 PM

২১ বছর বয়সী ওই তরুণীর অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে তাকে আটক করে রেল পুলিশের সদস্যরা। রাতে রেলওয়ে থানায় রেখে তাকে ‘পালাক্রমে ধর্ষণ করেন’ ওসি ওসমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এএসআই নাজমুল এবং কনস্টেবল মিজান ও হারুন।

এ ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পুলিশ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

মাদক আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার ওই তরুণীকে খুলনার মহানগর হাকিম আতিকুস সামাদের আদালতে তোলে রেলওয়ে পুলিশ। সেখানেই মেয়েটি বিচারকের সামনে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ধরেন।  

অভিযোগ শুনে বিচারক মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সোমবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর মেয়েটির কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।       

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. শফিকুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তার আগে তারা কিছু বলতে চান না।

ওই তরুণীর দুলাভাই বলেন, গত ২ অগাস্ট তার শ্যালিকা যশোর থেকে ট্রেনে করে খুলনায় পৌঁছান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে নামার পর সেখানে কর্তব্যরত রেল পুলিশের সদস্যরা তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করার কথা বলে।

“গভীর রাতে ওসি ওসমান গনি পাঠান মেয়েটাকে ধর্ষণ করে। এরপর আরও চার পুলিশ সদস্য পালা করে তাকে নির্যাতন করে। শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের কথা বলে একটা মামলা দিয়ে আমার শ্যালিকাকে আদালতে তোলা হয়।”

ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি ‘মোটা অংকের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব’ করেছিলেন দাবি করে ওই তরুণীর দুলাভাই বলেন, “আমরা সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় এখন হুমকি দিচ্ছে।”

তবে খুলনা জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শুনেছি ওই নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে তিনি আদালতে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তাকে মহিলা এসআই এবং মহিলা কনস্টেবল পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। থানায় রাতে তিনজন নারী পুলিশসহ আট জন পুলিশ পাহারায় ছিল। সেখানে তাকে ধর্ষণের কোনো সুযোগ নেই।”

মাদকের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই তরুণী ‘মিথ্যা অভিযোগ করেছেন’ বলে মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, ওই তরুণীকে তারা আইনি সহায়তা দেবেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংস্থার পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এদিকে অভিযোগ তদন্তে রেলওয়ে পুলিশ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ.ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম।

পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, খুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ৬/৭জন পুলিশ এক তরুণীকে ধর্ষণ ও মারপিট করেছে মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত করেন। এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

“তদন্ত কমিটিকে ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”