ডেঙ্গু: আক্রান্ত হচ্ছে ঢাকার বাইরেও

ঢাকার বাইরে বসবাস করেও অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অনেক সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2019, 05:05 PM
Updated : 1 August 2019, 05:33 PM

এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেক সরকারি হাসপাতালে। এ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন রোগী ও স্বজনরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম বলেন, ঝিনাইদহে থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন চার থেকে পাঁচজন। বাকিরা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহে এসে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

“গত ২৪ ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নয় রোগী। এ নিয়ে এ জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন ৩৭ জন। বর্তমানে সদর হাসপাতালে ২০ জনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।”

মাগুরা

মাগুরায় বাস করেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত তিনজন। সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

মাগুরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিকাশ কুমার  শিকদার জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রসহ এ হাসাতালে  বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১২ ডেঙ্গু রোগি ভর্তি হয়েছেন।

“গত ২৪ ঘণ্টায় আটজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন মাগুরায় থেকেও আক্রান্ত  হয়েছেন। তারা হলেন মাগুরা শহরের সাহাপাড়ার লিপি বিশ্বাস, শিবরামপুরের পান্না বেগম ও শ্রীপুরের মুক্তি খাতুন।”

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সম্মান শ্রেণির ছাত্র রবিউল ইসলাম। ভর্তি হয়েছেন মাগুরার সদর হাসপাতালে।

রবিউল বলেন, তিনি ঢাকা থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার মাগুরার সদর হাসপাতালে আসেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে।

“জরুরি বিভাগ থেকে আমাকে হাসপাতালের প্যাথলজিতে পাঠানো হলেও সেখানে গিয়ে আমি পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হই। বাইরে গিয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।”

হাসপাতালে ভর্তি হও শহরে সাহাপাড়ার লিপি বিশ্বাস ও শ্রীপুরের মুক্তি খাতুন একই অভিযোগ করেছেন।

তারা বলেন, তারাও  সরকারি  হাসপাতাল থেকে ফেরত গিয়ে টাকা দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন।

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন কুমার কুণ্ড বলেন, অনেক চেষ্টার পর ঢাকা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য অল্পকিছু কিডস পেয়েছেন। তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। ঈদের দুই-একদিন আগে থেকে জেলা পর্যায়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। সে কারণে হাসপাতালে কর্মরত সার্জনের প্রেসক্রিপশন ছাড়া জ্বর নিয়ে কেউ এলেই আপাতত তারা ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছেন না।

সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, “আগে না থাকলেও গত দুই দিন জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

“মাগুরা সদর হাসপাতাল ও মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজনসহ মোট ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসাপতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই-তিন জন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।”

নীলফামারী

নীলফামারীর সদর হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে চলছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা।

জেলার সিভিল সার্জন রণজিৎ কুমার বর্মণ বলেন, “হাসাপাতালে আবাসন সমস্যা থাকায় আলাদা কর্নার করা সম্ভব নয়। তাই সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের বিছানার পাশেই মশারি টানিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য কোনো সমস্য নেই। ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালেই করা হচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত সদর হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগীতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আবু শফি মাহমুদ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত নীলফামারী সদর হাসপাতালে চারজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একজন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত তিনজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা আশঙ্কামুক্ত।

নরসিংদী

নরসিংদী সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের মশারি ছাড়াই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া এখানে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন বেসরকারি হাসপাতালে তাদের কাছ থেকে ২৬০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ভেতরে রাখার কথা থাকলেও মাশারি ছাড়াই তাদের রাখা হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন রোগীরা।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের সামনে, মূল ভবনের সামনে-পেছনে পানি জমে আছে। দেখা গেছে নোংরা পরিবেশ।

ডেঙ্গু  আক্রান্ত ফারিয়া আক্তারের মা বিলকিস বেগম বলেন, “ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করলেও সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা নেই।

“অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেসরকারি সেন্টার থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছি আমরা। ৫০০ টাকার ফি নেওয়া হয়েছে ২৬০০ টাকা।”

নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সৈয়দ আমিরুল হক শামীম বলেন, “হাসপাতালে রক্তের সেল কাউন্টার মেশিন নেই। আমরা দরিদ্র রোগীদের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে সেল কাউন্টার করে দিচ্ছি। রোগীদের ২৪ ঘণ্টা মশারিতে রাখার নির্দেশ দেওয়া আছে।

“ডেঙ্গু রোগীদের বেশির ভাগই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী বেশি। ডেঙ্গু যাতে বিস্তার না করতে পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। নরসিংদীকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য বিভাগ সমন্বিত চেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো হবে।”

নেত্রকোণা

নেত্রকোণায় গত ২৪ ঘণ্টায় আটজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

জেলার সিভিল সার্জন তাজুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ এই আটজনকে তারা শনাক্ত করেছেন।

“তারা সবাই জেলার বাইরে থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের নেত্রকোণা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

মৌলভীবাজার

জেলার সিভিল সার্জন মো. শাহজাহান কবীর চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নয়জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

“তারা মৌলভীবাজারে বাস করলেও বিভিন্ন সময় ঢাকায় আসা-যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। দুইজন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, তিনজন সদর হাসপাতালে আর অন্যরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।”

সদর হাসপাতালে একটি ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

শেরপুর

সদর হাসপতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা খাইরুল কবির সুমন বলেন, তাদের হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুইজনসহ ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

“বর্তমানে এ হাসপাতালে ১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ইমতিয়াজ নামে এক রোগীকে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যরা সুস্থ হয়ে চলে গেছেন।”

এ হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসাধীন ১৫ জন রোগীই ভাল আছেন। স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে ঈদের সময় ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসা লোকজনের চাপ বাড়বে। তখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হতে পারে।”

কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে গত নয় দিনে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাহিনুর রহমান সরদার জানান, বৃহস্পতিবার ১২ জন রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদের রেজাল্ট এখনও আসেনি।

“এদের সকলেই আগে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি এসেছেন। দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষায় আবারও ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া গেছে।”