অভিজিৎ হত্যায় জিয়া-ফারাবীসহ ৬ জনের বিচার শুরুর আদেশ

ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সেনাবাহিনীতে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ও ‘উগ্রপন্থি’ ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2019, 11:01 AM
Updated : 16 Oct 2019, 12:53 PM

ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য একই সঙ্গে আদালত আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন।

আসামিরা হলেন- সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, শফিউর রহমান ফারাবী, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস্), আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ।

এদের মধ্যে জিয়াউল ও আকরাম ছাড়া বাকি চার আসামিকে অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে হাজির করা হয়। পলাতক দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আগেই জারি হয়েছে। এর মধ্যে জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।

কারাগারে থাকা কয়েকজন আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীরা অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুঁলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আসামিদের কাছে জানতে চান, তারা দোষী না নির্দোষ। তখন আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

এরপর বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করে দেন।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অভিজিৎকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। হামলা ঠেকাতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন তার স্ত্রীও। পরদিন অভিজিতের বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যামামলাটি করেন।

হত্যাকাণ্ডের চার বছর পর গত ১৩ মার্চ এই ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। অভিযোগের পক্ষে ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

অভিজিৎ হত্যামামলার আসামিদের মধ্যে ফারাবী ছাড়া বাকি সবাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। 

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি মোজাম্মেল, আকরাম, হাসান ও আবু সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৯২/২ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে অভিজিৎ রায়কে বিভিন্ন স্থানে অনুসরণসহ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন।

আসামি মোজাম্মেল রেকি টিমের নেতৃত্বে থেকে অপারেশন শাখার মুকুল রানা ওরফে শরিফুলকে অনুসরণসহ এ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক সহযোগিতা এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশন শাখার সদস্য আসামি আরাফাত রহমান, আলী ওরফে খলিল, অনিক এবং  অন্তু  সাংগঠনিকভাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করার। 

অভিজিৎকে তারা চারজনই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগপত্র বলা হয়। এসময় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও চাপাতির আঘাতে একটি আঙুল হারান।

অপারেশন শাখার চারজন আসামি যাতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে তার জন্য চারপাশে বেষ্টনি করে রাখে আসামি জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, মোজাম্মেল, আবু সিদ্দিক ও আকরাম।

বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের ছদ্মবেশ এই রকম হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা

আসামিদের মধ্যে মারা যাওয়ার কারণে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনজন। মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান।

হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া দলটির নেতৃত্বে থাকা মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ২০১৬ সালের ১৯ জুন ঢাকার খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, আনিক ও অন্তুর পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির জন্যও আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সময়ে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হলেও তদন্তে তাদের অপরাধ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পাওয়ায় সাত জনের নামে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এরা হলেন - সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আব্দুর সবুর ওরফে রাজু সাদ ও মাইনুল হাসান শামীম।  

পুরনো খবর-