কলসিন্দুরে ফুটবলকন্যাদের স্কুলে অগ্নিকাণ্ডের কিনারা হয়নি

ফুটবলে দেশের জন্য খ্যাতি আনা ময়মনসিংহের সেই মেয়েদের স্কুল কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিসে অগ্নিকাণ্ডের কারণ আড়াই মাসেও জানা যায়নি।  

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2019, 12:48 PM
Updated : 31 July 2019, 12:48 PM

গত ১৪ মে ওই অগ্নিকাণ্ডে ফুটবলকন্যাদের খেলাধুলার সনদপত্র ও মেডেল, রেজ্যুলেশন বই, স্কুলের ভোকেশনাল শাখার হিসাব-নিকাশের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায়। এছাড়া একটি পেনড্রাইভ ও একটি রেজ্যুলেশন খাতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এ ঘটনা তদন্তে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেও তা প্রকাশ করা হয়নি।

এছাড়া ধোবাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশও এ ঘটনার তদন্ত করছে।

তবে ওই বিদ্যালয়ের অফিসে থাকা ভোকেশনাল শাখার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট করা ও কিছু ঘটনার প্রামণ সরিয়ে ফেলাই এ অগ্নিকাণ্ডে কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখায় নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ৭৮ জন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়। দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ৬৩ জন। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড ফি অনুযায়ী টাকা নেওয়া হয়।

কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়ার নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়া এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির দায়ে স্কুলের ভোকেশনাল শাখার শিক্ষক সোহাগ মিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকে সোহাগ মিয়া পলাতক রয়েছেন। 

শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সোহাগ মিয়ার স্ত্রীকে চাপ দিলে তিনি অধ্যক্ষ রতন মিয়া ও শিক্ষক আবু নাঈম রিপনকে আসামি করে ধোবাউড়া থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন বলে অধ্যক্ষ জানান।

তবে অভিযোগটি এখন কোন পর্যায়ে আছে তা রতন মিয়া জানাতে পারেননি।

কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার দায়িত্ব কার কাছে ছিল জানতে চাইলে অধ্যক্ষ রতন মিয়া বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ জালাল মিয়া ভোকেশনাল শাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) আবু নাঈম রিপনের কাছে। তবে আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে আবু নাঈম রিপন দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।

তবে আবু নাঈম রিপন ভোকেশনাল শাখার দায়িত্বে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোকেশনাল শাখার দায়িত্ব কখনওই আমার কাছে ছিল না। কীভাবে আগুন লেগেছে তাও আমার জানা নেই। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ রতন সাহেব ভালো বলতে পারবেন।”

ভোকেশনাল শাখায় কতজন শিক্ষার্থী আছে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ রতন মিয়া জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। ভোকেশনাল শাখায় ভর্তি ফি কত তাও জানা নেই।

তিনি বলেন, “স্কুলের অফিস কক্ষে আগুন লাগায় ভোকেশনাল শাখার হিসাব-নিকাশের কিছু কাগজপত্র পুড়ে গেছে ও একটি পেনড্রাইভ নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।”

তবে ওই পেনড্রাইভে কী ছিল তা তিনি জানাতে পারেননি।

রতন মিয়ার ভাষ্য, বিদ্যালয় সরকারিকরণের কাজে বাধা সৃষ্টি করার জন্যই কেউ এমন কাজ করেছে।

কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী হিসাবরক্ষক সারোয়ার হোসেন একদিলের ফোনে একাধিক বার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। কলসিন্দুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও কলসিন্দুর নারী ফুটবল দলের ম্যানেজার মালারানী সরকার বলেন, “যারা এ ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচার চাই, যাতে কেউ এমন ঘটনা আর ঘটাতে না পারে।”

ধোবাউড়ার গামারীতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বলেন, কলসিন্দুল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শাখার অফিস কক্ষে আগুন লাগার ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

এ ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ধোবাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, “আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।”

এর চাইতে বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক একটা তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। তাতে সুনির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করা হয়নি।

তবে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন পেতে আরও সময় লাগবে।

ধোবাউড়া থানার ওসি আলী আহাম্মদ মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। গত রোববার (২৮ জুলাই) কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রতন মিয়া ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

তাবে তাদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে তা বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

আগুন লাগার ঘটনায় কী কী আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন হাজার পোড়া টাকাসহ অন্যান্য কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, “আগুন লাগার বিষয়টির তদন্ত আমাদের কাছে নেই। তবে কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন করম আলী ও চান মিয়াকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই।”