শতকোটি টাকা ‘পাচার’: নিউ বসুন্ধরার এমডি জিজ্ঞাসাবাদে

বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দুদকের করা ১১০ কোটি টাকা পাচারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2019, 05:36 PM
Updated : 28 July 2019, 05:37 PM

রোববার বাগেরহাটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আবীর পারভেজ এ আদেশ দেন।

গত ১৫ জুলাই নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ হয়ে যায়।  

একই মামলার অপর আসামি নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশের কড়া প্রহরায় প্রতারণা মামলার আসামি আব্দুল মান্নান তালুকদারকে হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে জেলা কারাগার থেকে বাগেরহাট আদালতে নিয়ে আসা হয়।

এর গত ১৫ জুলাই আব্দুল মান্নান তালুকদার আত্মসমর্পণ করলে তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়। ওইদিন বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একে আজাদ ফিরোজ টিপুর নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জন আইনজীবী মান্নানকে হাতকড়া ছাড়াই ঘিরে নিয়ে আইনজীবী আজাদ ফিরোজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তাকে কারাগার ফটকে পৌঁছে দেন।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে আদালতে দায়িত্বে থাকা পাঁচ পুলিশ সদস্যকে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়।

দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী বলেন, গত ৩০ মে বাগেরহাট শহরের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদক ১১০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে।

মিলন বলেন, আব্দুল মান্নান তালুকদার গত প্রায় নয় বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (একাউন্ট) হিসাবে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ সংগৃহীত এই বিপুল পরিমাণ অর্থ মান্নান তালুকদার ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে কোথায় কার কাছে পাচার করেছেন তা জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে আবেদন করেন।

“আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে মান্নানকে জেলগেটে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে দূর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুমতি দিয়েছেন।”

নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় শহরের মিঠাপুকুরপাড়ে অবস্থিত।

২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মান্নান তালুকদার নামে এক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম আনিসুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তিকে।

এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি গ্রাহকদের প্রতিলাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার প্রলোভনে বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন। যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি। গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (একাউন্ট) হিসাব থেকে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন। এই টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে তা জানতে দুদকের অনুসন্ধান চলছে।