সাঁওতালপল্লীতে আগুন-গুলি: অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পৌনে তিন বছর আগে সাঁওতালপল্লীতে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে তিনজনকে হত্যার মামলায় দেওয়া অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন সাঁওতালরা।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2019, 05:14 PM
Updated : 28 July 2019, 06:44 PM

সাঁওতালদের মামলায় এজাহারের প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে রোববার বিকালে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের আমতলীতে তারা অবরোধ করে।

এর আগে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী পল্লী মাদারপুর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তিন শতাধিক সাঁওতাল ওই এলাকায় এসে জড়ো হয়।

১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে।

কিন্তু ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গ করা হচ্ছে অভিযোগ করে দখল ফিরে পেতে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। এক পর্যায়ে গত ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তারা সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে।

ওই বছর ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে চারজন সাঁওতাল তাতে আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।

হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদের ঘটনায় মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মরমুর ছেলে স্বপন মুরমু ওই বছর ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া ২৬ নভেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল টমাস হেমব্রম আরেকটি মামলা করেন, যেখানে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।

ওই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় রোববার পিবিআই অভিযোগপত্র দেয়, যেখানে ৯০ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলার তদন্ত একসঙ্গে করে পিবিআই আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়।

অবস্থান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভ‚মি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, আদিবাসী নেতা বার্নাবাশ, প্রিসিলা মুরমু, স্বপন শেখ, সুফল হেমব্রম, হবিবুর রহমান, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, আদিবাসী নেতা রাফায়েল হাসদা প্রমুখ।

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভ‚মি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীতে সন্ত্রাসীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল নিহত হয়। আহত হন অসংখ্য সাঁওতাল, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়। এমনকি আদিবাসী সাঁওতাল শিশুদের স্কুলটি সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দেয়। মামলা দায়েরের প্রায় তিন বছর পর পুলিশ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

“সেই প্রতিবেদনে মামলার প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই চার্জশিটের মাধ্যমে আদিবাসী সাঁওতালদের সাথে পরিহাস করা হয়েছে।”

“অবিলম্বে এই মামলার চার্জশিট সংশোধন করে থমাস হেমব্রম কর্তৃক ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে যে মামলা করা হয়েছে তার আলোকে পুনরায় চার্জশিট দেওয়া হোক। বাদ দেওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও চাক্ষুস সাক্ষীসহ বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।”

এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে তারা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।

আগামী ৩০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ও ১০ অগাস্ট গোবিন্দগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।