মালিকরা বেঁকে বসায় স্বাভাবিক হয়নি লঞ্চ চলাচল

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ধর্মঘট স্থগিত হওয়ার পর মালিকপক্ষের অঘোষিত ধর্মঘটে দক্ষিণ জনপদের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকার লঞ্চ চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2019, 08:08 AM
Updated : 25 July 2019, 08:08 AM

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একটি কোম্পানির কয়েকটি লঞ্চ ছাড়া অন্য কোনো মালিকের লঞ্চ ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি।চাঁদপুর ও বরিশাল নদীবন্দর থেকেও মালিকরা কোনো লঞ্চ ছাড়তে দেননি।  

মালিকদের অভিযোগ, শ্রমিকরা ‘অযৌক্তিক’ দাবিতে বুধবার সারা দিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখায় তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। মালিকানা তাদের হাতে থাকলেও শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছেমত লঞ্চ চালাচ্ছে। 

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকালে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে লঞ্চ মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু জানান।

১১ দফা দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ধর্মঘটে বুধবার সারাদিন সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে।

প্রত্যেক শ্রমিককে মালিকের পক্ষ থেকে পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বুক, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমা, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রভিডেন্ট ফান্ড, খোরাকি ভাতা, কর্মকালীন মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, সমুদ্র ভাতা, মাস্টার ড্রাইভারদের ইনচার্জ ভাতার দাবি রয়েছে নৌযান শ্রমিকদের ওই ১১ দফার মধ্যে।

বুধবার দিনভর ধর্মঘটের পর বিকালে শ্রম অধিদপ্তরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ধর্মঘট স্থগিত করার ঘোষণা দেয় শ্রমিক ফেডারেশন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌযান শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও মালিকরা বেঁকে বসেন।

বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম-পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, এমনিতে প্রতিদিন সদরঘাট থেকে ৭০টির মত লঞ্চ দেশের বিভিন্ন উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায় কেবল এম ভি টিপুর চারটি লঞ্চ। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশালগামী গ্রীনলাইন ছাড়া আর কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।

লঞ্চ না ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে মিতালী লঞ্চের মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন মালিকরা ধর্মঘট ডেকেছে, তাই লঞ্চ চলাচল করছে না “

তবে এম ভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজালাল বলেন, “আমরা কোনো ধর্মঘটের ডাক দিইনি। লঞ্চের মালিক আমরা, কিন্তু তারা (শ্রমিকরা) নিজেদের ইচ্ছামত লঞ্চ পন্টুনে ভেড়ায়, আবার নিয়ে যায়। আমাদের না জানিয়ে গতকাল লঞ্চ চালানো বন্ধ করে দিল। আবার বিকালে এসে বলল লঞ্চ চালাবে। এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না “

২০১৬ সালে শ্রমিকদের বেতন কাঠামোর গেজেট জারি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পরবর্তী গেজেট হবে ২০২১ সালে। এর মাঝে গত দেড় বছরে তারা বিভিন্ন ইস্যু ধরে কয়েকবার ধর্মঘট ডেকেছে, তাতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে।”

এদিকে টানা দ্বিতীয় দিনের মত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর শুনে বৃহস্পতিবার সকালে ঘাটে এসে লঞ্চ না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের।  

চাঁদপুর নদী বন্দরে শোভন নামের এক যাত্রী বলেন, “গতকাল সারাদিন নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে সন্ধ্যা থেকে আবার লঞ্চ চলাচল শুরু হবে শুনেছিলাম। এখন ঘাটে এসে দেখি লঞ্চ চলছে না। লঞ্চ না চললে সেটা আগে বলে দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আমাদের এত দুর্ভোগে পড়তে হত না।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে চাঁদপুর-ঢাকা রুটের এমভি রফ রফ লঞ্চের মালিকের প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, “আমরা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তারা যখন ইচ্ছে কর্মবিরতি করে। আমাদের সাথে তারা কোনো যোগাযোগ করার প্রয়োজন মনে করে না। অযৌক্তিক কিছু দাবি নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে, এর প্রতিবাদে আজ লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে মালিকপক্ষ।”