জজ আদালতে মিন্নির জামিন শুনানি ৩০ জুলাই

বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবীরা হাকিম আদালতের সাড়া না পেয়ে জজ আদালতে তার জামিনের আবেদন করেছেন। 

বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 08:02 AM
Updated : 23 July 2019, 09:38 AM

মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ মো. আসাদ্দুজামানের আদালতে এ আবেদন করা হয়।

মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী অসলাম জানান, বিচারক জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত করে নিম্ন আদালতের নথি তলব করেছেন। আগামী ৩০ জুলাই এ বিষয়ে শুনানি হবে।

এর আগে সোমবার আদালতে মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার ও তার চিকিৎসার জন্য বরগুনার জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর হয়।

বিচারক আবেদন ফেরত দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেন।

আসলাম বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। মিন্নির জবানবন্দি প্রত্যাহার ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিতে আবারও হাকিম আদালতে আবেদন করা হবে।

গত ২৬ জুন মিন্নির স্বামী শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করে একদল লোক। এ ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জন ও মিন্নিসহ মোট ১৩ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

পুলিশ মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টার মাথায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মিন্নির বাবার অভিযোগ, ভয় দেখিয়ে ও নির্যাতন করে এই জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, শনিবার তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা বরগুনা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেছেন।

“মিন্নি আমাদের বলেছে, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে। সেই সঙ্গে মিন্নি উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথা বলেছে।”

গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন; তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে।

সম্প্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে পত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়।

তবে শ্বশুর অভিযোগ তোলার পর মিন্নি তা অস্বীকার করে পাল্টা বলেছিলেন, দুলাল শরীফ ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায়’ পড়ে তাকে জড়িয়ে ‘বানোয়াট’ কথা বলছেন।

এরপর গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সেদিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, তিনি তিন জন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাদের দাঁড়ানোর কথাও ছিল, কিন্তু তারা শুনানিতে অংশ নেননি।

ওই তিন আইনজীবী শুনানিতে না দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে ওকালতনামায় সই না হওয়ার কথা বললেও মিন্নির বাবা বলেন, ‘প্রতিপক্ষের ভয়েই’ আইনজীবীরা তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়াননি।

আইনজীবী না থাকায় সেদিন মিন্নিকেই কথা বলার সুযোগ দেন বিচারক। মিন্নি তখন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমার স্বামী রিফাত শরীফ। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। হত্যাকাণ্ডে আমি জড়িত নই। এ মামলায় আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।”

রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে, তা নিয়ে রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়। এর পেছনে প্রভাবশালী কারও প্ররোচনা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন একজন সংসদ সদস্য।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে শুক্রবার বিকালে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।

এ সময় মিন্নির বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন আদালত প্রাঙ্গণে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন করে’ তার মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এসব কিছুই শম্ভু বাবুর (সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেইভ করার জন্য আমাদের বলি দেওয়া হচ্ছে।”

এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বা তা ছেলের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তিনি শনিবার রাতে মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলামকে তার চেম্বারে ডেকে নেন বলে আইনজীবীরা জানান।

মাহাবুবুল বারী আসলামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এমপি শম্ভু একজন সিনিয়র আইনজীবী। তার সাথে দেখা করেছি। তবে রিফাত হত্যা মামলা নিয়ে কোন কথা হয়নি।”