পায়ের জোরও হারাচ্ছে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়া

উন্নত চিকিৎসার অভাবে পায়ের শক্তি হারিয়ে ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে চার বছর আগে মাগুরায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক চোখ হারানো সুরাইয়া।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 07:43 AM
Updated : 23 July 2019, 08:02 AM

ঢাকায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে উন্নত চিকিৎসা কারালে সে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারত বলে চিকিৎসকরা জানালেও চা বিক্রেতা বাবার পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে পরিবার জানিয়েছে।

মাগুরা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শফিউর রহমান বলেন, “সুরাইয়ার একাধিক শরীরিক সমস্যা রয়েছে। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। পায়ের শক্তি হারিয়ে সুরাইয়া ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধী হওয়ার দিকে আগাচ্ছে।”

২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ার পাড়ে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির  আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সুরাইয়ার চাচা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ভূঁইয়ার সঙ্গে স্থানীয় আলী আকবর গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন মমিন ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি। সে সময় সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ নাজমা বেগম পেটে গুলিবিদ্ধ হন।

তার অস্ত্রোপচার করেছিলেন চিকিৎসক শফিউর রহমান ও একই হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত কুমার কুণ্ড।

জয়ন্ত কুমার বলেন, “স্থানীয় চিকিৎসা যথেষ্ট নয়। পায়ের শক্তি অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।”

সেটা সম্ভব না হওয়ায় শিশুটি পরিবারের বোঝা হয়ে বেড়ে ওঠার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 

সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম বলেন, “চিকিৎসকরা তার চোখের চিকিৎসাসহ উন্নত থেরাপি দেওয়ার জন্য প্রতি মাসে না হলেও তিন মাস পরপর ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থভাবে তা আমরা করতে পারি নাই।

“এ কারণে তার ডান চোখটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ডান চোখের চিকিৎসা না হওয়ায় বাম চোখও নষ্ট হওয়ার পথে। অন্যদিকে উন্নত ফিজিওখেরাপি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আভাবে দুটি পায়ের শক্তি হারিয়ে সুরাইয়া শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। চার বছর বয়স পূর্ণ হলেও অন্যের সাহায্য ছাড়া সে এখন দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না।”

নাজমা বলেন, “চোখের সামনে নিষ্পাপ মেয়েটি চিকিৎসার অভাবে সারা জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। চা দোকানি স্বামীর সামান্য আয়ে সংসার চালিয়ে মেয়েকে নিয়মিত ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।”

“সরকার যদি এখনও তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিত, তাহলে সুরাইয়া হয়ত সুস্থ হয়ে উঠত।”

এদিকে চার বছর পার হয়ে গেলেও এ ঘটনার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, “সন্ত্রাসের কারণে আমার নিষ্পাপ শিশুটি পঙ্গু হয়ে গেল। অন্যদিকে তার কোনো বিচারও হল না।”

তিনি সুরাইয়ার সুচিকিৎসা ও এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।

মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ মামলাটির অভিযোগ গঠনের পর আর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

মাগুরা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি সৈয়দ ফিরোজুর রহমান বলেন, বিচারকদের বদলিজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক না থাকায় মামলাটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

“বিচারক শূন্যতা কেটে গেলে সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন এবং অপরাধীদের সাজা হবে বলে আমি আশাবাদী।”

২০১৫ সালের ২৩ মার্চ ঘটনার দুই দিন পর মাগুরা থানায় ১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। এর মধ্যে এক আসামি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পুলিশ তার নাম বাদ দিয়ে নতুন করে আরও তিন আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।