পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে রোববার বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার ইদ্রিস আলী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি আরও ২ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রোববার সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ফরিদপুরের বন্যা কবলিত তিনটি উপজেলার ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান রোববার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসনে সাতটি করে ১৪টি এবং সদরপুরে ১২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এছাড়া সদরপুরে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তিনি জানান।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় নদীর পানি বেড়ে তিনটি চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। নদীর পানি ঘরে উঠায় চরম বিপাকে রয়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে খেটে খাওয়া হতদরিদ্ররা।
চর নাছিরপুর ইউনিয়নের মোল্যাকান্দি গ্রামের লোকজন টংঘর তুলে বসবাস করছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবও রয়েছে তাদের। পানি আনতে সাঁতরে যেতে হয় প্রায় দুশ মিটার দুরে। গবাদি পশুর গোখাদ্য ও সংকট রয়েছে। এমনিভাবে শত শত পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে পানিবন্দি হয়ে।
আড়িয়াল নদীতে ভাঙন অব্যাহত ভাঙনের মুখে পড়ে শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপজেলার চর নাছিরপুর, দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া, ঢেউখালী ও চরমানাইর চারটি ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদের পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় তিন হাজার বিঘা ফসলি জমি। বিভিন্ন এলাকার রোপা আমন ধানের বীজতলা ও সবজি পানিতে নিমজ্জিত এবং কাঁচা ঘর, সেতু ও গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার বলেন, বন্যায় প্লাবিত পানিবন্দি পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে এবং ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রশাসন সর্বদা তাদের পাশে রয়েছে।
চর নাছিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. আক্কাছ আলী বলেন, ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিতদের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে চরবাসী মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা ও আশ্রয়ন কেন্দ্র না থাকার কারণে বানভাসি মানুষের সীমাহীন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু এহসান মিয়া বলেন, বন্যায় পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে তাদের মাঝে সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, ওই ইউনিয়নের ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। ইউনিয়নের চার হাজার পরিবারের অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে।
“পানির কারণে জমির ধানসহ সব ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষ বাইরে যেতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে, ফলে পানিবন্দিরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।”
রোববার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের এক হাজার পরিবারের মধ্যে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির প্রকল্পের আওতায় পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সকাল থেকে ট্রলারে করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে এসব চাল বিতরণ করা হয়।