সোমবার বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক গোলক চন্দ্র বিশ্বাস ‘নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
একই মামলায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান পলাতক রয়েছেন বলে দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী জানান।
আব্দুল মান্নান তালুকদার ছিলেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির সাবেক কর্মচারী এবং আনিসুর রহমান ছিলেন বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম।
দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৩০ মে বাগেরহাট শহরের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদক মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে।
“ওই মামলায় তিনি সোমবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।”
আদেশের পর আসামি আব্দুল মান্নান এজলাস থেকে বের হলে তার আইনজীবীরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখেন। এজন্য তার ছবি তোলা যায়নি। তার আইনজীবীরা তাকে আদালত থেকে নিচতলা পর্যন্ত পৌছে দে।
তাকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে না তুলে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে জেলা কারাগার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়।
গত ৩০ মে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাওন মিয়া বাদী হয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি টাকা পাচারের একটি মামলা করেন।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় শহরের মিঠাপুকুরপাড়ে অবস্থিত।
এদিকে, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারকে কারাগারে পাঠানোয় গ্রাহক ও সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা মান্নান তালুকদারের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
দুদকের মামলার নথি ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মান্নান তালুকদার সেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম আনিসুর রহমানকে।
এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর মান্নান গ্রাহকদের প্রতি লাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রলোভনে বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন। গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি হিসাব (একাউন্ট) থেকে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন তার হিসাবে। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন। এই টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে তা জানতে দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একে আজাদ ফিরোজ টিপুর নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জন আইনজীবী আসামি আব্দুল মান্নান তালুকদারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন।