বজ্রপাতে সাত জেলায় ১৬ জনের মৃত্যু

ময়মনসিংহ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও শরীয়তপুরে বজ্রপাতে দুই শিশুসহ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শিশুসহ আরও দুইজন।

জেলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2019, 04:37 PM
Updated : 13 July 2019, 04:44 PM

শনিবার সকাল থেকে বিকালের মধ্যে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এদের মধ্যে ময়মনসিংহ ও পাবনায় চারজন করে, চুয়াডাঙ্গায় তিনজন, সুনামগঞ্জে দুইজন এবং নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও শরীয়তপুরে একজন করে নিহত হন।  

ময়মনসিংহ

জেলার ফুলপুর, তারাকান্দা ও ফুলবাড়ীয়ায় দুপুরে বজ্রপাতে চারজন নিহত হয়েছেন; আহতও হয়েছেন একজন।

নিহতরা হলেন ফুলপুরের পয়ারী গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন (৪০) ও বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের খামার ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া (২৪), তারাকান্দার ধলীয়া গ্রামের চান মিয়া (৫০) এবং ফুলবাড়ীয়ার কালাদহ ইউনিয়নের বড়বিলার জেলে চৈত বর্মণ (২২)।

আহত মনিন্দ্র বর্মণ (২৪) চৈত বর্মণের ভাই।  

ফুলপুর থানার ওসি ইমারত হোসেন গাজী জানান, বেলা ১২টার দিকে পয়ারী গ্রামের জামাল উদ্দিন বাড়ির পাশে জমিতে ধানের চারা রোপন করতে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে আহত হন।

“একই সময় বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে সোহাগ মিয়া পালিত হাঁস বিলে নিয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।”

তারাকান্দা থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, দুপুরে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ধলীয়া গ্রামের চান মিয়ার মৃত্যু হয়।

ফুলবাড়িয়া থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান,

 উপজেলার কালাদহ ইউনিয়নের বড়বিলা এলাকায় মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে চৈত বর্মণের মৃত্যু হয়। এ সময় তার ভাই মনিন্দ্র বর্মণ আহত হন।

পাবনা

পাবনার বেড়া উপজেলায় পাট জাগ দেওয়ার সময় বজ্রপাতে দুই ছেলে ও বাবাসহ চারজন নিহত হয়েছেন।

বেড়ার ইউএনও আফিফ আনান সিদ্দিকী জানান, চাকলা ইউনিয়নের পাচুরিয়া গ্রামে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন ওই গ্রামের জুয়েল সরদারের ছেলে মোতালেব সরদার (৫৫), মোতালেবের দুই ছেলে ফরিদ উদ্দিন (২২), শরিফ উদ্দিন ও একই গ্রামের ফকির উদ্দিনের ছেলে রহম আলী (৫৫)।

ইউএনও আফিফ স্থানীয়দের বরাতে বলেন, তারা নিজেদের বাড়ির পাশের একটি ডোবায় বৃষ্টির মধ্যে পাট জাগ দেওয়ার কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন।

চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

বিকালে খোরদ গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন মেহেরপুর জেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে মোহাম্মদ হুদা (৩৫), মকবুল হোসেনের ছেলে আল আমিন (৩০) ও বরকত আলীর ছেলে হামিদুল ইসলাম (৩০)।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোনিয়া আহমেদ জানান, তাদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় মাছের খামারে বজ্রপাতে বাবা-ছেলে নিহত হয়েছেন।

তাহিরপুর থানার এসআই রাপি আহমদ জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন ওই গ্রামের নিয়াজ আলী ছেলে খামার মালিক হারিদুল ইসলাম (৪৭) ও হারিদুলের ছেলে তারা মিয়া (১২)।

স্থানীয়রা জানান, হারিদুল ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশে তার চিংড়ির খামার দেখতে গিয়েছিলেন। এ সময় খামারে বজ্রপাত হলে তারা ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

এসআই রাপি বলেন, অভিযোগ না থাকায় লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নেত্রকোণা

নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য মাঠে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে এক তরুণ নিহত হয়েছেন।

রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোজাম্মেল হক জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত এনামুল হক (২২) ওই ইউনিয়নের সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

ইউইপ সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে মাঠে নিয়ে যাচ্ছিলেন এনামুল হক। পথে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। স্থানীয়রা তাকে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন।

বিকালে জারইতলা ইউনিয়নের সাজনপুর হাওরে ঘটনা ঘটে।

নিহত আব্দুল হাসিম (৬০) সাজনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আমিনের ছেলে।

নিকলী থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, বিকালে সাজনপুর হাওরে আব্দুল হাসিম গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছিলেন। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে আব্দুল হাসিম ও তার গরুটির মৃত্যু হয়।  

শরীয়তপুর

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় বজ্রপাতে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় একই বয়সী আরেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

শনিবার বিকালে মোক্তারের চর ইউনিয়নের মূলপাড়া চেরাগ আলী বেপারী কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সুমআইয়া আক্তার (৯)  মূলপাড়া চেরাগ আলী বেপারী কান্দি গ্রামের আলমগীর ছৈয়ালের মেয়ে।

সুমাইয়ার ভাই আহত সিয়ামকে (৯) নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সে সুমাইয়ার একই শ্রেণির ছাত্র।

নড়িয়া থানার ওসি মঞ্জুরুল হক আকন্দ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম বেপারী জানান, চেরাগ আলী বেপরী কান্দির গফুর বেপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া ও সিয়াম বিকাল ৫টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি শেষে বাড়ি ফিরছিল।

“এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে পথে মতি বেপারীর বাড়ির কাছে বজ্রপাতে এ দুই শিশু মারাত্মক আহত হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমাইকে মৃত ঘোষণা করেন।”