স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন জানিয়েছে, তিস্তার তীরবর্তী নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি চরগ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
ডালিয়ার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী এ এস এম আমিনুর রশীদ বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে। সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় কিছুটা কমে বিপৎসীমা বরাবর প্রবাহিত হয়।
“দুপুর ১২টা থেকে ধাপে ধাপে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। বেলা ১২টায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার, বিকাল ৩টায় তা ২০ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর ওঠে।”
তবে রাত থেকে পানি কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ডালিয়ার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা।
নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা এবং বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি চরগ্রামের পাঁচ হাজার পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
প্রকৌশলী আমিনুর রশীদ আরও বলেন, পরিস্থতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সবকয়টি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, গত সোমবার রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে নদীর বিপৎসীমার ১০ সেন্টেমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা ১২টার পর থেকে কমতে শুরু করে।
“বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নদীর বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।”
এতে এসব গ্রামের অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ডিমলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেস্বর ও পূর্বছাতনাই মৌজার প্রায় নয় শত পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে থাকে।
“দুপুরের দিকে এসব পরিবারগুলোর বাড়িঘরে হাঁটু সমান পানি ওঠে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী পনিবন্দি মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে বলা হচ্ছে।”
একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, “আমার ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি ও পূর্বখড়িবাড়ি দুই মৌজায় প্লাবিত হয়ে দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চরখড়িবাড়ি মৌজায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত দুই কিলোমিটারের বালুর বাঁধটি হুমকির মুখে পুড়েছে। যেকোনো সময় বাঁধটি বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।”
ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপনী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ইউনিয়নের ছোটখাতা ও বাইশপুকুর গ্রামের প্রায় সারে চারশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জলঢাকার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেইন বলেন, বৃহস্পতিবার তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের হলদিবাড়ি ও ভবনচুর গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হয়।
“এতে নদীর তীরবর্তী অন্তত ১৫টি চরাঞ্চল গ্রাম প্লাবিত হয়ে ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদে সড়ে যেতে বলা হয়েছে।”
তিস্তা ব্যারেজের সবকয়টি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুর্বল স্থানগুলো শক্তিশালীকরণে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।