সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর ছিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও তিন দিন থাকবে। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। ইতোমধ্যে দুই উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, জেলার ১৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদরে ২২টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৮, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২৭, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৩, ছাতক উপজেলায় ১০, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৩০, তাহিরপুর উপজেলা ১৯ এবং ধর্মপাশায় ৫৮টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের আফিয়া বেগম বলেন, “দুই দিন ধইরা ঘরে পানি উঠছে। ঘরে খাবার নাই। আমাগো চেয়ারম্যান চিঁড়া আর গুড় দিছেন। প্রতি বেলা কি আর চিঁড়া-গুড় খাওয়া যায়?”
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফুল মিয়া বলেন, তার ইউনিয়নেন প্রায় ৮০ ভাগ বাড়িতে পানি উঠে গেছে। এসব মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
“এখনও কোনো সাহায্য আমার পাইনি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি আমাকে পানিবন্দি মানুষকে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন। অনেকের ঘরের ভেতরে কোমর পানি। ঘরে থাকা সম্ভব নয়। প্রায় অর্ধশত পরিবারকে আমি ব্যক্তিগত উদ্যেগে সুরমা ব্রিজ সংলগ্ন বাজারের একটি গোডাউনে জায়গা করে দিয়েছি। খাওয়ার জন্য চিঁড়া ও গুড়ের ব্যবস্থা করেছি।”
নেত্রকোণা
উপজেলা প্রাথমিক মিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার রাস্তাগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এসব স্কুল খোলা রাখা হলেও পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা জানান, বৃষ্টি আর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি ঢলের পানিতে এ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের সব কয়টিতেই কমবেশি পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে রংছাতিসহ চারটি ইউনিয়নে বেশি পানি ঢুকেছে। এতে নিচু এলাকার ৪০ থেকে ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিন শতাধিক পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের সাহায্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়নবোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলার সোমেশ্বরী, উব্ধাখালি, কংস ও ধনু নদীর পানি বাড়ছে। তবে গত চার দিন ধরে পানি ওঠানামা করছে। বৃষ্টি ও ঢলের গতি বাড়লে পানি বাড়ে, আবার গতি কমলে পানি কমে। এভাবে প্রতিদিন গড়ে ৩০ সেন্টিমিটার পানি ওঠানামা করছে। এতে করে মাঝে মাঝে সোমেশ্বরী, কংস ও উব্ধাখালির পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা নাগাদ সব নদীর পানিই বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, দুই উপজেলায় ১০ মেট্রিকটন করে মোট ২০ মেট্রিকটন চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার পর প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।