গাইবান্ধায় নদীতীরে ভাঙন, বহু গ্রাম প্লাবিত

গাইবান্ধায় গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্র নদে ভাঙন শুরু হয়েছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2019, 03:52 PM
Updated : 10 July 2019, 04:57 PM

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার পাঁচটি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি, অসংখ্য গাছপালা ও উঠতি পাটসহ অন্তত ১০০ বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। ওইসব গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।

অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। তারা সরকারি পতিত জায়গা, আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা ব্রক্ষপুত্র ও তিস্তার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, বর্ষণ, নদীর পানি বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার সময় নদী ভাঙন দেখা দেয়। গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নদী তীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চারটি ও সদর উপজেলার দুইটি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি, অসংখ্য গাছপালা ও উঠতি পাটসহ প্রায় ১০০ বিঘা জমি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সকালে ভাঙনকবলিত গ্রামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে কেউ কেউ নিরাপদে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। কেউ বাঁধে ঘর তুলছে। কেউ জিনিসপত্র নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের কৃষক দীপক চন্দ্র (৪৮) বলেন, তার তিনটি টিনের তৈরি ঘর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রক্ষপুত্র নদের গর্ভে চলে যায়। কয়েকদিন থেকে এক আত্মীয়ের জায়গায় ঘর তুলে আছেন তিনি।

একই গ্রামের কৃষক সুভাষ চন্দ্র (৬০) বলেন, তার দুই বিঘা জমির পাট গত সাতদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

একই গ্রামের জোহরা বেগম (৫০) নিজের ভাষায় বললেন, “তোমরা ভালো করি নেকেন, সরকার যানি হামারঘরোক থাকার জাগা (জায়গা) দ্যায়।”

রায়দাসবাড়ী গ্রামের আবদুল আজিজ বলেন, অব্যাহত ভাঙনে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। অন্যের জমিতে গিয়ে আপাতত অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করবেন।  

এদিকে, তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে গোঘাট সংলগ্ন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর, কাপাসিয়া, পুটিমারি ও লালচামার গ্রামে।

দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের ভাঙনে নিঃস্ব কৃষক আতোয়ার মিয়া (৬০) নিজের ভাষায় বললেন, “হামারঘরে বাপ-দাদার ভিট্যা, জমাজমি, বাড়িঘর পানিত ভাসপ্যার নাগচে। এ্যাক সপ্তাহ আগোত দুইট্যা ঘর নদীত চলি গেল, কিচুই করব্যার পানো না। একন বানদোত আচি। সেই বানদো (বাঁধ) ভাঙি যাবার নাগচে।”

পুটিমারি গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন (৫০) বললেন, গত এক সপ্তাহে তিস্তার ভাঙনে তার দুই বিঘা জমি, বসতভিটাসহ দুইটি ঘড় বিলীন হয়েছে। বাড়ি ভাঙার পর থেকে পাশ্ববর্তী শ্রীপুর গ্রামের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন পিরবার নিয়ে।

তিনিও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।

কাপাসিয়া গ্রামের কৃষক আছির উদ্দিন (৫৫) বলেন, “কয়দিনে হামারঘরে তিনট্যা ঘর, দুইবিগে জমি ভাঙি গেচে। বানদোত থাকপ্যার জাগা পাই নাই। সাতদিন থাকি হামরা মানসের জাগাত আচি।”

গত কয়েকদিনে দফায় দফায় বর্ষণ ও উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে গোটা দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রাম বিলীন হবে। বিষয়টি পাউবোকে জানানো হয়েছে; অথচ কোনো কাজ হয়নি।

তিনি বলেন, নদী তীরবর্তী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ভাঙন রোধে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি নেই। তবে সম্প্রতি সদর উপজেলার কামারজানি এলাকায় সিসি ব্লক দিয়ে এক হাজার ২০০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে ব্যয় হয় সাড়ে সাত কোটি টাকা। গোঘাট এলাকায় ভাঙন রোধে নতুন করে কর্মসুচি হাতে নেওয়া হবে।