দেড়মাসেও জ্ঞান ফেরেনি বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী মরিয়মের

ভুল ইঞ্জেকশনে অজ্ঞান হওয়া গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মরিয়ম সুলতানা মুন্নির জ্ঞান দেড়মাসেও ফেরেনি।

গোপালগঞ্জ প্রতিনধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2019, 04:17 PM
Updated : 8 July 2019, 04:54 PM

গত ২১ মে থেকে তিনি অচেতন রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে।

বিষয়টি নিয়ে ওই ছাত্রীর পরিবার উদ্বিগ্ন। এছাড়া প্রতিদিন তার চিকিৎসায় পরিবারের বিপুল টাকা ব্যয় হচ্ছে।

পিত্তথলির পাথর অপসারণের জন্য ওই শিক্ষার্থী গত ২০ মে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সার্জরি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরেদিন (২১ মে) তার অপারেশন করার কথা ছিল। এদিন সকালে ওই বিভাগের নার্স শাহানাজ পারভীন ভুল করে গ্যাসের ইনজেকশনের পরিবর্তে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে দেন। তখন থেকে অজ্ঞান রয়েছেন তিনি।

মরিয়মের পরিবার জানায়, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপতালের চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক বোর্ড বসিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে খুলনা আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপতালে পাঠান। পরদিন সেখান থেকে তাকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে নেওয়া হয়। তারপর থেকে আচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে।

এ ঘটনা তদন্তে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

অন্যদিকে এ ব্যাপারে ২৪ মে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ওই শিক্ষার্থীর চাচা জাকির হোসেন বাদী হয়ে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তপন কুমার মণ্ডল, নার্স শাহনাজ পারভিন ও কুহেলিকাকে আসামি করে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন।

২৬ মে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভিন ও কুহেলিকার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর শরীরে ভুল ইনজেকশন পুশ করার সত্যতা মিলেছে। এছাড়া সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ তপন কুমার মণ্ডলকে ভবিষ্যতে আরও সতর্কতার সাথে কর্তব্য পালনের পরামর্শ করা হয়েছে।

মুন্নির বড় ভাই হাসিবুল রুবেল বলেন, “এখনও আইসিইউতে অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে মুন্নি। চিকিৎসক বলেছেন সময় লাগবে সুস্থ হয়ে উঠতে। তবে আর কতদিন লাগবে সুস্থ হতে এ বিষয়ে চিকিৎসকরা কিছু বলতে পারেনি।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, “মুন্নির বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে। তার পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। মুন্নির উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে আরও টাকা দেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আসামিরা হাই কোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে রেববার ডা. তপন কুমার মন্ডল, নার্স কুহেলিকা গোপালগঞ্জের আমলি আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন।

শুনানি শেষে বিচারিক হাকিম হুমায়ূন কবির তাদের জামিন নাকচ করে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিন নার্স শাহানাজ পারভীন আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন বলে ওসি জানান।