সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাশ বাংলাদেশ পাদদেশে মুখে কালো কাপড় বেঁধে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
গত ২৫ জুন আইইআরের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের লিখিত অভিযোগ করেন।
পরে দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইইআর পরিচালকের কাছে একই অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় পরদিন ইনস্টিটিউটের এক জরুরি সভায় অধ্যাপক বিষ্ণুকে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ষের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিফা হক শেফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইনস্টিটিউট যে তদন্ত কমিটি করেছে, তার প্রতিবেদন এখনও দেয়নি। আর এ ধরনের বিষয় বিলম্ব হলে সেটা ধামাচাপা পড়ে যায়। বিষয়টি কারোরই মনে থাকে না।”
“একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে, এ রকম একটি বিষয় ধামাচাপা পড়ে যাক এটা আমরা চাই না। এখানে আমরা দাঁড়িয়েছি যাতে ইনস্টিটিউট অতিদ্রুত প্রতিবেদন জমা দেয়। আর আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত। সেখানে যে দোষী সাবস্ত্য হবে, তার শাস্তিই আমরা চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তার কোনো তদন্ত কমিটি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
আতিফা হক শেফা বলেন, “একই অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দিলেও তারা এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি দূরে থাক আমাদের সঙ্গে কথাও বলেনি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিক। আর ইনস্টিটিউটের ওপর প্রেসার ক্রিয়েট করুক, যাতে অতিদ্রুত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।”
আরেক শিক্ষার্থী রিজওয়ানুল আলম বলেন, “অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে সেই শিক্ষকের যথাপোযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করুক। তদন্ত কমিটি করুক। এছাড়া ক্যাম্পাসে মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যাপারটিও বিবেচনায় আনুক।”
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবুল হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার আমরা একটি মিটিং করেছি। সেখানে আমরা অভিযোগের সত্যতা যাচাই কীভাবে এগোতে পারি, সে বিষয়ে আলাপ হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করেনি। তবে আজ আমরা প্রশাসনকে এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে, তা জানাব।”
এদিকে, গত ২৮ জুন অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে উল্লেখ করে নিরাপত্তা চেয়ে নগরীর মতিহার থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী (জিডি নম্বর ১১০৮ ও ১১০৯)।
৩০ জুন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে অধ্যাপক বিষ্ণুর বিচার দাবি করেন।
সবশেষ ১ জুলাই তার অব্যাহতির আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউটের সকল শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিষ্ণু কুমার অধিকারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারী।
২৯ জুন অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারী এ ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মীদের লিখিত ব্যাখা দেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, তার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের অভিযোগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক, সাজানো, অসত্য, ষড়যন্ত্রমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই চক্রান্তমূলক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অভিযোগের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।