ঘর দেওয়ার আশ্বাসে ইউপি সদস্যের প্রতারণার অভিযোগ

‘ঘর দেওয়ার কথা বলে’ গোপালগঞ্জে কয়েকজন হতদরিদ্রের কাছ থেকে অন্তত চার লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2019, 03:47 PM
Updated : 4 July 2019, 03:47 PM

এ ব্যাপারে মুকসুদপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আলীর কাছে ৩০ জন দরিদ্র ওই সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সেই ইউপি সদস্য জাকির শেখ অভিযোগ স্বীকার করে ওই টাকা ফেরৎ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, জায়গা আছে ঘর নেই প্রকল্পের আওয়াতায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বরাদ্ধকৃত ঘর ও গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে গত বছরের ডিসেম্বরে ওই ইউপি সদস্য ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০ জন হতদরিদ্রের কাছ  থেকে ১৫ হাজার টাকা করে অন্তত চারলাখ টাকা আদায় করেন।

কিন্তু ছয় মাস অতিবাহিত হলেও তিনি ঘর ও গভীর নলকূপ দিতে ব্যর্থ হন। ঘর ও টিউবওয়েলের পরিবর্তে টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে ইউপি সদস্য তাদের হয়রানি করতে থাকেন।

তাই প্রতিকার পেতে ক্ষতিগ্রস্তরা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

ননীক্ষীর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনি শেখ বলেন, “গত ডিসেম্বর মাসে জাকির আমাদের ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমরা দিনমজুর ধার দেনা করে তাকে এ টাকা দিয়েছি।”

এ রকম আরও অন্তত ২৮ জনের কাছ থেকেও তিনি টাকা নিয়েছেন বলে মনি শেখ জানান।

তিনি বলেন, “তিনি আমাদের ঘর দিতে পারেননি।  টাকা ফেরৎ চাইলে নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন, হয়রানি করছেন। এ কারণে টাকা ফেরৎ পেতে আমরা ৩০ হতদরিদ্র পরিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি।”

ইউপি সদস্য জাকির শেখ  টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি ১৬ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। তবে সবাই ১৫ হাজার করে টাকা দেয়নি। কেউ ৫ শ’, কেউ এক হাজার টাকা কম দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের প্রকৌশলী আল মামুন আমার ওয়ার্ডের লোকজনদের ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার কথা বিশ্বাস করে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে টাকা তুলে তাকে দিয়েছিলাম। মামুন স্যার টাকা ফেরৎ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। স্যার টাকা দিলে আমি গ্রামের লোকজনের টাকা ফেরৎ দিয়ে দেব। টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি আমার ইউপি চেয়ারম্যানকেও বলেছি।”

ননীক্ষীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিনা বলেন, “আমি শুনেছি জাকির মেম্বার কিছু লোকের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। আমি আমার পরিষদের সকল সদস্যদের নিয়ে সভা করে অনেক আগেই ঘর বাবদ কোনো টাকা না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। জাকির আমাকে এ বিষয় আগে জানায়নি।  এখন সাধারণ মানুষের টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে।”

মুকসুদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের প্রকৌশলী আল মামুনের মোবাইলে বারবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। এছাড়া তাকে ক্ষুদ্র বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অফিসের কর্মরতরা বলেন, প্রকৌশলী আল মামুনের এ ধরনের টাকা নেওয়ার অভ্যাস রয়েছে।

মুকসুদপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা তাসলিমা আলী বলেন, “এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। এ ঘটনায়  জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”