বুধবার চার সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান জানান।
এ নিয়ে এ ঘটনায় দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। এর আগের কমিটি করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
উপজেলার নয়নপুরের ফরিদপুর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ‘অটো স্পিনিং লিমিটেড’ কারখানায় মঙ্গলবার দুপুরে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট প্রায় ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুন লাগার পরপর টয়লেটে আটকা পড়া এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়। এরপর বুধবার ভোর ৪টার দিকে কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনটি পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। একইদিন দুপুরে পাওয়া যায় আরও দুটি লাশ।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে বুধবার চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দীলিপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আক্তারুজ্জামান বলেন, ওই কারখানার ফায়ার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ জুন। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন দেওয়ার পর কারখানাটি পরিদর্শনও করা হয়েছে। কিন্ত পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, বুধবার তদন্তে নেমেছে জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটি।
এই কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। আর বড়ো গুদামের উপরে তাপ শোষণের জন্য লাগানো ফোম জাতীয় দাহ্য ফলস সিলিং এবং নিচে তুলা থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে গেছে।
“অগ্নিনির্বাপনে কারখানায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও প্রয়োজনীয় পানি মওজুদ রাখার মতো রিজার্ভ ট্যাংকি ছিল না। এত বড়ো কারখানা ও গুদামের জন্য রিজার্ভ ট্যাংকির আয়তন কম ছিল।”
এছাড়া আশপাশে জলাধার/জলাশয় না থাকায় দমকল কর্মীরাও পানি সংকটে পড়েন। তাই আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তদন্তে উঠে এসেছে।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে সাত কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঢাকার সহকারী পরিচালকের দপ্তরের পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম জানান, ২২ মে তিনি ওই কারখানাটি পরিদর্শন করে গেছেন।
“পরিদর্শনকালে দেখতে পাই কারখানায় স্বয়ংক্রিয় ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশনের কোনো কিছুই ছিল না। দুর্ঘটনার সময় বা জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিক জরুরি বহির্গমনের পথ ছিল না। বিকল্পপথগুলোও বাধামুক্ত ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, পানির একটি ওপেন রিজার্ভয়ার থাকলেও তা ছিল ময়লাযুক্ত, শতভাগ ব্যবহার উপযোগী ছিল না। এ ছাড়াও আরও একটি অপর্যাপ্ত ধারণক্ষমতাযুক্ত আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভয়ার রয়েছে, যেখান থেকে পানি আনা ছিল দুঃসাধ্য।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, গাজীপুরের উপ-মহাপরিদর্শক ইউসুফ আলী বলেন, কলকারখার অন্যান্য সমস্যা তেমন ছিল না। তবে কারখানায় পানির পর্যাপ্ত রিজার্ভয়ার ছিল না।
কারখানার জিএম হারুন-অর-রশিদ বলেন, আগুন নির্বাপণের সকল সরঞ্জাম ছিল; কিন্তু আগুনের ব্যাপকতা এত বেশি ছিল যে সেসব সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। একই কারণে পানির স্বল্পতাও দেখা দিয়েছিল।