প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন গত বুধবার। সরকারি চাকরির আশ্বাস পেয়ে শনিবার অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে গেছেন চাঁদের কণা।
এ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে।
বিপ্লব বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব প্রতিবন্ধীদের ভাতা দিচ্ছে। সরকার এই প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে।
“চাঁদের কণা অনশন করেছে। বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় তার উপযুক্ত চাকরি খুঁজে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অবগত আছেন।”
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে মাহবুবা হক চাঁদের কণা। নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটি পা অচল হয়ে যায়। বাবা-মায়ের চেষ্টায় দুই হাতে ভর করেই তিনি প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নেন।
রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাশ করেছেন এবং ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৩ সালে।
চাকরির আশ্বাসের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে চাঁদের কণা তার ফেইসবুকে লেখেন, “প্রধানমন্ত্রীর আশ্বস্ত করেছেন, যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরির ব্যবস্থা করবেন। এজন্য আজ আমি অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান।
“আমি আরও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের, যারা আমাকে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।”
চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করে জীবিকা চালিয়েছেন।
শিক্ষা জীবনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হত। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।”
অনশনে বসার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, “লেখাপড়া শেষ করার পর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হতে আর চার মাস বাকি আছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছি।”
অনশনে বসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছিলেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। উনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। আমি আশা করি, উনার সাথে দেখা হলে, আমার কথাগুলো বলতে পারলে, তিনি একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন।”