টাঙ্গাইলে রানী হেমন্ত কুমারীর পুকুর দখলে লাল নিশান

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ব্রিটিশ আমালে পুঠিয়ার রানী হেমন্ত কুমারীর খনন করা একটি পুকুরের দখল নিতে সেখানে লাল নিশান পুঁতে দিয়েছেন এক ব্যক্তি।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2019, 08:32 AM
Updated : 28 June 2019, 08:32 AM

প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর ওই পুকুরটির মালিকানা নিয়ে গত ৪৭ বছর ধরে মামলা চলছে।  

ইজারা সূত্রে পুকুরের মালিকানার দাবিদার মাহফুজ আরিফ বলছেন, আদালতের আদেশ নিয়েই তিনি পুকুরে লাল নিশান লাগিয়েছেন।

কিন্তু সরকারের ভূমি কর্মকর্তারা একে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।   

সুপেয় পানির অভাব থাকায় পুঠিয়ার রানী হেমন্ত কুমারী ব্রিটিশ আমলে ঘাটাইল উপজেলার কুলিয়া গ্রামে তার প্রজাদের জন্য ওই পুকুর খনন করে দেন। স্থানীয়দের কাছে পুকুরটি আন্দা দিঘী নামেও পরিচিত।

উপজেলা ভূমি কর্মকর্তারা জানান, ১৯৬২ সালে পুকুরটি সরকারের খাস জলাশয় হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু ১৯৭২ সালে বিরাহিমপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান মিয়া ওই পুকুরের মালিকানা দাবি করেন।

তারা পুকুরটি দখল করতে চাইলে এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের সংর্ঘষও হয়। পরে এ নিয়ে মামলা করে এলাকাবাসী।

মান্নান মিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে মাহফুজ আরিফ ও ফুয়াদ আরিফ পুকুরের মালিকানার দাবিতে ওই মামলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েক দিন আগে স্থানীয় কয়েকজনকে দিয়ে তারা পুকুরের মধ্যে লাল নিশান পুঁতে দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ওই পুকুরের জমি ইজারা নেন মান্নান মিয়া। কাজটি তিনি করেন পুকুরটিকে কৃষি জমি হিসেবে দেখিয়ে। তবে মান্নান পরিবার কখনও ওই জমি বা পুকুর ভোগদখল করতে পারেনি।

দীর্ঘদিন মামলা চলার পর নিম্ন আদালত মান্নানের ইজারা বাতিল করে রায় দেয়। পরে হাই কোর্টেও সেই রায় বহাল থাকে।

২০০০ সালে পুকুরটি সরকারি জলাশয় হিসেবে জেলে সমিতির মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হলে মান্নানের পরিবার আবার হাই কোর্টে যায়। ২০১৬ সালে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়।

একই বছর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

এ অবস্থায় টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ২০১৬ সালে পুকুরে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে তিনটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর সেই সাইনবোর্ড উধাও হয়ে যায়। এ নিয়ে থানায় জিডি করেন ঘাটাইল ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্তকর্তা।

এলাকাবাসী জানায়, মামলা ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় তিন বছর ধরে পুকুরটি ইজারা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে মান্নানের ছেলে মাহফুজ আরিফ পুকুরের দখল নিতে লাল নিশান পুঁতে দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাহফুজ আরিফ বলেন, “পাকিস্তান আমলে আমার বাবা ওই জমির বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। আমরা হাই কোর্ট থেকে রায় পেয়েই দখল বুঝে নিয়ে লাল নিশান দিয়েছি।”

অন্যদিকে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুর নাহার বেগম বলেন, “পুকুরের মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে। যদি কেউ পুকুরটি দখল করে নিশান দিয়ে থাকে তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। অতি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“