‘নির্যাতন-ঘুষ দাবি’, কিশোরগঞ্জে ১৪ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় নির্যাতন ও ঘুষ দাবির অভিযোগে চৌদ্দ পুলিশের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2019, 03:11 PM
Updated : 27 June 2019, 03:11 PM

কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সায়েদুর রহমান খান মামলা দুটি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার ও দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতের সেশন সহকারী তরিকুল ইসলাম জানান, বুধবার বিকালে মামলা দুটি দায়ের করা হলে আদেশের জন্য মুলতবি রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে আদালত আদেশ দেয়।

পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়ার শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা এবং ঘুষ দাবির অভিযোগে মামলা করেছেন একই এলাকার শেখ সাদিয়া সুলতানা।

দুটি মামলাতেই বাদীর আইনজীবী ছিলেন রহম আলী।

শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা তার এজাহারে বলেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ভৈরব থানার পুলিশ একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তার স্বামী শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে আটক করে। পরে হাইকোর্টের জামিনে ওই বছরের ১১ মার্চ মুক্তি পান। কিন্তু জেলের ভিতর থাকা অবস্থায় অন্য একটি মাদক মামলায় তার স্বামীকে আসামি করা হয়। পুলিশ এই মামলায় অভিযোগপত্রেও তার স্বামীকে আসামি করে এবং চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল আদালতে তা গৃহীত হয়।

এর জের ধরে চলতি বছরের ১৮ মে শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে আটক করে থানায় নিয়ে পুলিশের একটি দল সম্মিলিতভাবে তার উপর মারাত্মক শারীরিক নির্যাতন করে বলে মামলায় অভিযোগ করেন সুমনা।

শেখ আশরাফুল আলম বিজন বর্তমান ওই মামলায় কারাগারে আছেন।

এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে আশরাফুলের স্ত্রী শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা বাদী হয়ে ১৪ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল খান, ভৈরব থানার ওসি মুখলেছুর রহমান, আট এসআই আব্দুল আজিজ, অভিজিৎ চৌধুরী, মুখলেছুর রহমান, মতিউজ্জামান, আবুল খায়ের, এস এম জালাল বিন আমির, শেখ আমজাদ ও আনোয়র হোসেন মোল্লা, চার কনস্টেবল মোমেন মিয়া, আবির সরকার, মমতাজ উদ্দিন ও নিজাম। 

আদালত কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে এ মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান বাদীর আইনজীবী রহম আলী।    

অপর মামলার বাদী শেখ সাদিয়া সুলতানা এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ভৈরব থানার পুলিশ একটি বিস্ফোরক মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তার বড় ভাই শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে আটক করে। পরবর্তীতে হাই কোর্টের জামিনে ওই বছরের ১১ মার্চ তিনি মুক্ত হন।

কিন্তু জেলের ভিতর থাকা অবস্থায় একটি হত্যা মামলায় তার ভাইকে আসামি করা হয় এবং ২০১৬ সালের ১১ অগাস্ট পুলিশ তাকে আটক করে।

পরবর্তীতে তার ভাই জামিনে মুক্তি পেয়ে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ভৈরব থানায় গিয়ে ওই মামলার ঘটনার সময় তিনি যে কারাগারে ছিলেন সে বিষয়ে কাগজপত্র দেখান। এ সময় পুলিশ তার কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে বলে সাদিয়া মামলায় অভিযোগ করেন।

এক লাখ টাকা না দিলে মামলার অভিযোগপত্রে তার নাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ করেন মামলায়।

অভিযোগে বলা হয়, ঘুষ না দেওয়ার কারণে তার ভাই শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে পুলিশ এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করে এবং আদালতে তা গৃহীত হয়।

এ ঘটনায় শেখ সাদিয়া সুলতানা বাদী হয়ে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল খান, ওসি মুখলেছুর রহমান ও এসআই আনোয়ার হোসেন মোল্লাকে আসামি করে ঘুষ দাবির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান বাদীর আইনজীবী রহম আলী।    

শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা বলেন, ভৈরব পৌর এলাকার ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা আমার স্বামী শেখ আশরাফুল আলম বিজন একজন ব্যবসায়ী এবং আমার শ্বশুর মরহুম শাহাজাদা মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দল বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও বিনা কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।