ফরিদপুরে স্কুলের নৈশ প্রহরী নিখোঁজ, মেঝেতে রক্তাক্ত শার্ট

ফরিদপুরে একটি বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী নিখোঁজ হয়েছেন; তবে কর্মস্থলে তার রক্তাক্ত শার্ট পাওয়া গেছে।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2019, 05:08 PM
Updated : 25 June 2019, 05:09 PM

স্থানীয় মাদকসেবীদের সঙ্গে বিরোধের কারণে তার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

“সেখানকার আলামত দেখে মনে হয়েছে ইয়াকুবের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।”

এই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় স্কুলের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সাত বছর ধরে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮)। পাশাপাশি তিনি জেলা শহরের দক্ষিণ আলীপুরের একটি সেলুনেও কাজ করেন।

তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামে।

স্বজনরা জানান, সোমবার ইয়াকুব আলী গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখান থেকে স্কুলের ডিউটি করতে ওইদিনই সন্ধ্যায় রওনা হন শহরে কর্মস্থলে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে স্কুল থেকে ইয়াকুবের পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়, স্কুলের বারান্দায় রক্ত পড়ে আছে, কিন্তু ইয়াকুবের কোনো খোঁজ মিলছে না। এরপর ইয়াকুবের স্ত্রী তার মা ও ভাইদের নিয়ে স্বামীর খোঁজে স্কুলে ছুটে আসেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বেগম বলেন, “সকালে স্কুলে প্রথম আসেন ঝাড়ুদার দুলাল জমাদ্দার। তিনি এসে স্কুলের গেট বন্ধ পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে আমার বাড়ি আসেন। পরে দপ্তরি রেজাউল করিমকে ডেকে এনে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করি।

“এ সময় স্কুলের বারান্দায় ইয়াকুবের গায়ের রক্তাক্ত শার্ট, ফ্লোরে কয়েক জায়গায় অনেক রক্ত ও মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও ইয়াকুবের পরিবারকে খবর দেই।”

ইয়াকুবের স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই এখানে (স্কুলে) ডিউটি করতে চাচ্ছিলেন না তিনি (ইয়াকুব)। এখানে গত জানুয়ারি মাসেও কম্পিউটার ল্যাবে চুরি হয়েছে।

স্বজনদের আহাজারি

“তাছাড়া মাদকসেবীদের প্রচুর আড্ডা হতো। এগুলো ইয়াকুব পছন্দ করত না। অনেকবার স্কুলে নালিশও করেছে। এছাড়া ওর কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো ঝামেলা ছিল না।”

ইয়াকুবের শ্যালক মিনারুল ইসলাম বলেন, তার দুলাভাই গত কয়েকদিন ধরে খুব ভয়ে ছিলেন। কারণ স্থানীয় মাদকসেবীরা রাতে স্কুলের বারান্দায় মাদকের আসর বসাত। এগুলোতে বাধা দিতেন তিনি। এই কারণে তার বেশ শত্রুও তৈরি হয়েছিল।

“কয়েকদিন আগে দুলাভাই আমাকে বলেছিল- আমার স্কুলে যেতে ভয় করে। রাতে ঘুম আসলে কখন যে ওরা কী করে ফেলে তার ঠিক নাই। তুই আমার সঙ্গে চল, রাতে আমার সঙ্গে থাকবি।”

ইয়াকুবের পরিবারের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বলেন, “মাঝে মধ্যে মাদকসেবীরা রাতে উৎপাত করত। বিষয়টি ইয়াকুব আামাদের জানালে আমরা এই এলাকায় থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে মৌখিকভাবে তা জানাই। পরে পুলিশ মাদকসেবীদের কয়েকবার ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়েছে।”