রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় এ দুর্ঘটনার পর থেকে সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের স্টেশন মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস রাত ১০টায় সিলেট ছেড়ে এসে মাইজগাঁও স্টেশনে থামে। এরপর ভাটেরা ও বরমচাল স্টেশন পার হয়ে মোটামুটি ২০০ মিটার যাওয়ার পর পাঁচটি বগি লাইন ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
এর মধ্যে একটি বগি বড়ছড়ার কালভার্ট ভেঙে নিচে ছড়ায় পড়ে যায়। আর দুটি বগি উল্টে পড়ে লাইনের পাশের ক্ষেতের মধ্যে।
দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ শুরু করে। ট্রেন থেকে তারা চারজনের লাশ উদ্ধার করেন বলে ফায়ার সার্ভিসের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান।
কুলাউড়া থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী এবং একজন পুরুষ। তাদের মরদেহ কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
আহতদের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরাইলের শাহবাজপুরে বেইলি ব্রিজ স্থাপনের কাজ চলায় ঢাকা-সিলেট বাস চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। ফলে ট্রেনের উপর চাপ ছিল বেশি। উপবনের ১৭টি বগির সবগুলোই ছিল যাত্রীতে ঠাসা।
আহত এক যাত্রী কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে বগিটি খালে পড়ে গেছে, তিনি এবং তার বাবা ও ভাই ওই বগিতেই ছিলেন। বরমচাল পার হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর ট্রেন বেশি দুলতে শুরু করে। এরপর কালভার্টে ওঠার পর তাদের বগি একপাশে কাত হয়ে খালে পড়ে যায়।
তবে কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে- সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি রেলওয়ে কর্মকর্তারা। রেল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রেলওয়ের চিফ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ব) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. নুরুল ইসলাম জানান, ট্রেনের যে সাতটি বগি সামনে লাইনের ওপর ছিল, সেগুলোকে রাত সোয়া ৩টার দিকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উদ্ধারকারী একটি ট্রেন এসে সকালে আরও পাঁচটি বগি উদ্ধার করে কুলাউড়া স্টেশনে পাঠিয়ে দেয়।
“বাকি বগিগুলো খালে বা লাইনের পাশে পড়ে গেছে, দুমড়ে মুচড়ে গেছে। অনেকটা জায়গায় রেললাইন বেঁকে গেছে। বগিগুলো উদ্ধার করে লাইন মেরামত করতে সময় লাগবে।
শ্রীমঙ্গলের স্টেশন মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম এবং শমসের নগরের স্টেশন মাস্টার কবির হোসেন জানান, উপবন দুর্ঘটনায় পড়ার পর কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, সুরমা মেইল, পারাবত এক্সপ্রেস পথে আটকা পড়ে। লাইন কখন চালু হবে সেই নিশ্চয়তা না থাকায় যাত্রীদের অনেকেই নেমে বিকল্পভাবে যাওয়ার চেষ্টা করেন।