ক্রিকেট ব্যাট-স্টাম্পে স্বাবলম্বী ফরিদপুরের ফারুক

ক্রীড়া সামগ্রী তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফরিদপুরের ওমর ফারুক। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বেশ কিছু লোক। তারাও এখন অর্থনৈতিকভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভাল রয়েছেন।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2019, 02:57 PM
Updated : 19 June 2019, 03:42 PM

ওমর ফারুকের কারখানায় তৈরি ক্রিকেট ব্যাট ও স্টাম্প এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে নিয়মিত।  

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর বাজার এলাকায় ওমর ফারুকের বাড়ি। এখানেই তিনি গড়ে তুলেছেন তার ক্রীড়া সামগ্রী তৈরির কারখানা।

বুধবার সরেজমিনে কানাইপুর বাজারে সিনেমা হল পট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, বিরামহীমভাবে ঘুরছে কারখানার মোটরের চাকা। এখানে কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট স্টাম্প ও ব্যাট। সাত-আটজন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ কাঠের মাপ ঠিকঠাক করে সাইজ করছেন, কেউ যান্ত্রচালিত মেশিনের সামনে নিয়ে জমা করছেন, কেউবা ওই কাঠ দিয়ে স্টাম্প আর ব্যাট তৈরি করছেন।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিষ্ঠানে মূল উদ্যোক্তা ওমর ফারুকের সঙ্গে।  

দরিদ্র পরিবারের ছেলে ত্রিশোর্ধ্ব ওমর ফারুক। কাজের সন্ধানে ১৯৯৪ সালে গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় যান। সেখানে কয়েক বছর ক্রীড়া সামগ্রী তৈরির কাজ শিখে বাড়ি ফিরে আসেন।  

লেখাপড়া না জানা ফারুক নিজেই ছোট পরিসরে একটি মেশিন দিয়ে একটি কারখানা গড়ে তোলেন। নিজে দিন-রাত পরিশ্রম করে ক্রিকেটের ব্যাট ও স্টাম্প তৈরি করে নিয়ে যেতেন জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকায়। নিজের তৈরি ক্রীড়া সামগ্রীর মার্কেট ধরতে বিভিন্ন দোকানে দোকানে ধরনা দিতে হতো তাকে।

এখন আর সেই কষ্টের দিন নেই। ওমর ফারুকের দিন পাল্টেছে। তাকে আর ছুটতে হয় না এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। নিজের কারখানাতে বসেই অর্ডার পাচ্ছেন। দিন-রাত ৭-৮ জন শ্রমিক মিলে কাজ করেও শেষ করতে পারছেন না অর্ডারের কাজ।

ওমর ফারুক জানালেন, চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাজের চাপ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে।

প্রকারভেদে প্রতিটি ব্যাট বিক্রয় হয় ১২০ থেকে ২৮০ টাকয়; আর স্টাম্প বিক্রয় হয় প্রতি সেট ২৫শ থেকে ২৮শ টাকা করে।

তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছিল তার, কিন্তু দারিদ্র্য তাকে সেই পথে বেশি দূর যেতে দেয়নি। বাধ্য হয়েই কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে মাঠে গিয়ে অন্যের ক্ষেতে কাজ করতে হতো। তবে সেই কাজ বেশিদিন করতে পারেননি তিনি। ওই কাজে তার মন বসত না। তাই কাজের সন্ধানে চলে রাজধানীতে চলে যান।

তিনি বলেন, “আমি দেশের বহু জেলায় ক্রিকেটের স্টাম্প ও ব্যাট তৈরি করে সরবরাহ করি; আর সেই ক্রীড়া সামগ্রী দিয়ে প্র্যাক্টিস করে আজ তৈরি হচ্ছে ভালো ভোলো খেলোয়াড়।”

তার বহুদিনের ইচ্ছা সুযোগ পেলে তিনি দেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য ব্যাট ও স্টাম্প তৈরি করবেন।

কারখানায় কর্মরত ওমর ফারুক

কানাইপুরের ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, লেখাপড়া না জেনেও যে উদ্যোক্তা হওয়া যায় তার নজীর কানাইপুরের ওমর ফারুক। সে নিজে এবং তার প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের তিনি স্বাবলম্বী করেছে।

চেয়ারম্যান বেলায়েত আরও বলেন, সমাজে আজ কিশোর থেকে শুরু করে অনেক যুবকই বিপথগামী হচ্ছে; কেউ আর খেলার মাঠে যেতে চায় না। কিন্তু ওমর ফারুক দরিদ্র পরিবারের হয়েও নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।

কানাইপুরের স্কুল শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ওমর ফারুক আমাদের যুব সমাজের উদাহরণ। সে দারিদ্র্যকে জয় করে নিজেকে ও প্রতিষ্ঠানে অন্যদেরও স্বাবলম্বী করেছে।”

তিনি সরকারের কাছে ওমর ফারুকের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার আবহান জানান।