বগুড়ায় থানায় ব্যবসায়ীকে ‘নির্যাতন’, ৪ পুলিশ বরখাস্ত

বগুড়ায় এক নারীর কথিত অভিযোগে সদর থানার এক তরুণ ব্যবসায়ীকে প্রচণ্ড মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2019, 06:02 PM
Updated : 15 June 2019, 06:49 PM

এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরা হলেন এসআই জব্বার, এএসআই এরশাদ, নিয়ামত ও কনস্টেবল এনামুল।

সোহান বাবু ওরফে আদর (৩২) নামের ওই ব্যবসায়ীকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আদরের বাবা সাইদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ২৪ ঘণ্টা তাকে থানায় নির্যাতন করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি (সাইদুর) সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছাড়িয়ে এনেছেন।

আদর বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া উটের মোড় এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে।

সাইদুর রহমান বলেন, শহরের গোয়ালগাড়ি এলাকায় ‘আল ফালাহ বহুমুখী সমিতি’ নামে একটি ব্যবসায়িক সংগঠন আচে। তার ছেলে সোহান বাবু আদর, সাথী বানু ও সাথীর স্বামী বাপ্পি মিয়া তিনজন অংশীদার ওই সমিতি পরিচালনা করেন।

তিনি জানান, নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে সাথী বানুর একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় সদর থানার কনস্টেবল (মুন্সি) এনামুল হক আদরকে মোবাইল ফোনে থানায় ডেকে নেন।

সোহান বাবু ওরফে আদর

“থানায় যাওয়ার পর এসআই আব্দুল জব্বার, এএসআই এরশাদ ও মুন্সি এনামুল হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে একটি পিলারের সাথে বেঁধে রেখে সাথীর পাওনা বাবদ ১১ লাখ টাকা দাবি করেন আদরের কাছে। দাবির যৌক্তিকতা না থাকায় টাকা দিতে অস্বীকার করে আদর।”

সাইদুর বলেন, টাকা না পেয়ে শুক্রবার এএসআই এরশাদ থানা হাজতে এসে আদরের নাম ধরে ডেকে বলেন- ‘আদর তোকে আদর যত্ন না করলে তো টাকা দিবি না। আয় এবার তোকে একটু আদর করে দেই।’ একথা বলে হাজত থেকে বের করে অন্য একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে এরশাদ একটি পিলারের সাথে আদরের হাত বেঁধে বেদমভাবে পেটায় ও চেঁচামেচি করেন।

“ওইদিন রাতে আবার এএসআই এরশাদ, এসআই জব্বার ও কনস্টেবল এনামুল একসঙ্গে লাঠিপেটা শুরু করেন। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ভয় পেয়ে যায় পুলিশ। তখন সাথীকে দিয়েই আদরের বাবা সাইদুরকে থানায় ডেকে আনেন।”

সাইদুর বলেন, রাত ১২টায় তিনি থানায় উপস্থিত হলে জব্বার বলেন- ‘তোর ছেলে সুস্থ আছে, ভালো আছে এই মর্মে মুচলেকা লিখে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে যা।

বাধ্য হয়ে সাইদুর পুলিশের লেখা মুচলেকায় সই দিয়ে ছেলেকে থানা থেকে বের হন বলে জানান।

এরপর তিনি ছেলেকে বাড়ি না নিয়ে সরাসরি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক। পুলিশের লাঠিপেটায় আদরের কোমরের নিচ থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত এমনভাবে থেঁতলে গেছে যে সে হাসপাতালের বিছানায় চিৎ হয়ে শুতেও পারছে না।”

আদর বলেন, তার ব্যবসায়িক অংশীদার সাথী বানু ও তার স্বামী বাপ্পি মিয়া শহরের কাটনারপাড়া আলোরমেলা স্কুল এলাকার বাসিন্দা। সাথী বানু তার পূর্ব পরিচিতা। সাথীর স্বামী বাপ্পী তার বাল্যবন্ধু। পরিচয়ের সূত্রে সাথী ও তার স্বামীর অর্থে এবং তার পরিশ্রমের বিনিময়ে পার্টনারশীপের ব্যবসাটি গড়ে ওঠে।

আদর জানান, জামানত হিসেবে আদরের কাছ থেকে তার স্বাক্ষর করা কয়েকটি ব্যাংক চেক জামানত হিসেবে রেখে দেয় সাথী দম্পতি। সম্প্রতি সাথীর ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে সাথীর মনোমালিন্য হয়। এর জের ধরে সাথী তার পুলিশ দিয়ে তাকে শায়েস্তা করলেন বলে আদরের ভাষ্য।

এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সোহান বাবু আদরকে থানায় আনা হয়েছিল। পরে অভিযোগকারী ও  অভিযুক্তের মধ্যে আপস মীমাংসা হলে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী বলেন, নির্যাতনের এই ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত চার পুলিশকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

“তদন্ত সাপেক্ষে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”