গত ২ জুন রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের প্রধান গেট সংলগ্ন স্থানে স্কুল শিক্ষিকা পারভীন আক্তারের নির্মাণাধীন ভবনের ভিত নির্মাণের সময় মাটি ধসে তিন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন।
এ ঘটনায় নির্মাণাধীন ভবনটির মালিক সদর উপজেলার কাটাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার, তার ভাই যুবলীগ নেতা আলিমউল্লাহ এবং শ্রমিকদের মাঝি তোফাজ্বল হোসেনের বিরুদ্ধে রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার এসআই জসীমউদ্দীন হত্যা মামলা করেছেন।
পারভীনের স্কুলের সহকর্মী জানান, পারভীন আক্তার শনিবারও তার চাকরিস্থল কাটাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন।
তবে পুলিশ বিষয়টি জানে না বলে দাবি করছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা লিমন বোস বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। আমাদের অভিযান ও তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। আশা করছি শীঘ্রই আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারব।”
তবে মামলার মূল আসামি পারভীন আক্তার শনিবার স্কুলে উপস্থিত ছিলেন- এমন তথ্য তিনি জানেন না বলেছেন।
এছাড়া তদন্ত কার্যক্রমে কোনো প্রকার রাজনৈতিক চাপ নেই বলেও দাবি করছেন লিমন বোস।
এদিকে, এই ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও রিপোর্ট দেয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত কার্যক্রম চলছে। আমরা শীঘ্রই প্রত্যক্ষদর্শীসহ সকলের সাথে কথা বলে রিপোর্ট পেশ করব।”
এই দুর্ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি নির্মাণাধীন ভবনের মালিক পারভীন আক্তার সরকারি চাকরিজীবী হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
পারভীনের স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিতা চাকমা বলেন, “আমি ঘটনাটি লোকমুখে ও পত্রিকায় পড়ে জেনেছি। সে আজ (শনিবার) স্কুলে এসেছিল এবং শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে একটি ছুটির আবেদন দিয়ে গেছে।”
মমিতা জানান, ঈদের ছুটির কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। শনিবারই স্কুল খুলেছে এবং পারভীনও অন্যান্য শিক্ষকদের মতো স্কুলে এসেছিলেন।
সরকারি চাকুরেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বিষয়ে রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেন, “তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া কিংবা পুলিশ গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে এমন বিষয়টি আমার জানা ছিল না। স্বাভাবিক নিয়মানুসারে এমনটা হলে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত চাকরি থেকে বরখাস্ত থাকার কথা। বিষয়টি খোঁজ নিলে বলত পারব।”
রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এসএম শফি কামাল বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা ওই স্থানে গিয়ে প্রকৃত দোষীদের আসামি করে মামলা করার ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি এবং সেই মোতাবেক মামলাও হয়েছে। এখন আসামি গ্রেপ্তার না হওয়াটা দুঃখজনক। এই বিষয়ে যাদের দায়িত্ব তাদেরকে আমরাও অনুরোধ করব যেন কোনো অপরাধী পার না পায়।”
ওইদিন মাটিচাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিলেন নির্মাণ শ্রমিক সেন্টু মিয়া, আঙ্গুর আলী ও পাপ্পু।