রাজশাহীর সেই সজলকে মুক্তির নির্দেশ, ওসিকে শোকজ

রাজশাহীতে গ্রেপ্তার হওয়া এক যাবজ্জীবন দণ্ডিতের ছোটোভাই নির্দোষ সজল মিয়াকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে আদালত।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2019, 12:33 PM
Updated : 12 June 2019, 12:35 PM

আদালত একইসঙ্গে আসামি না হয়েও কেন যাবজ্জীবন দণ্ডিত হিসেবে সজলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের শাহমখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজকে।

সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা জানান, বুধবার রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (প্রথম) বিচার মনসুর আলম এ আদেশ দেন।

আদেশে ওসি মাসুদ পারভেজকে সাত দিনের মধ্যে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সজল নগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া মহল্লার তোফাজ উদ্দিনের ছেলে। সজলের বড় ভাই সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় ২০০৯ সালে ফজলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার আগে থেকেই তিনি পলাতক। গত ৩০ এপ্রিল শাহমখদুম থানা পুলিশ সজলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ফজল হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, “অপরাধী না হয়েও সজল কয়েদি হিসেবে সাজা ভোগ করেছেন। তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। ওসির শোকজের জবাব পাওয়ার পর আদালত এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেবেন সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করব।”

তারপর প্রয়োজনে মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী সজলের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করে আদালতে আবেদন করবেন বলে মোহন কুমার জানান।

মোহন কুমার আরও বলেন, আদালতের আদেশের পর সজলকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালত থেকে আদেশের অনুলিপি সেখানে পাঠানো হবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না। না থাকলে সজলকে মুক্তি দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে দুজন সাক্ষী ওসিকে হলফ করে বলেছিলেন, ‘এটাই আসামি’। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে।

এদিকে, বিনাদোষে গ্রেপ্তার করায় শাহমখদুম থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজেরে শাস্তি দাবি করেছেন সজলের আরেক ভাই মো. বাবু।

তিনি বলেন, “সজলকে গ্রেপ্তারের পর আমরা অনেক বুঝিয়েছি। ওসি কোনো কথা শোনেননি। ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাসে আমাদের সন্ধ্যা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিলেন থানায়। তারপর সকালে আসতে বলেন। আমরা আবার ভোর ৬টায় থানায় যাই। দুপুর পর্যন্ত বসিয়ে রেখে সজলকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেড় মাস ধরে আমরা হয়রানি হলাম। তাই ওসির শাস্তি চাই।”

সজলের আইনজীবী জানান, সজলকে যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয় তখন তার নাম ফজল বলেই পুলিশের গ্রেপ্তারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। দুইজন সাক্ষী এ ব্যাপারে এফিডেফিট করে দেওয়ায় তাকে সেদিন কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ২৬ মে সজল আসামি নন দাবি করে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তির জন্য আবেদন করেন। এরপর মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এদিন আদালত না বসায় পরদিন আবারও শুনানি হলো। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর অব্যাহতি পেলেন সজল।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তার শারীরিক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়। এখন আবার পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেপ্তার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। পুলিশ ভুল করে তাকে ফজল ভেবে গ্রেপ্তার করেছে।

বুধবার সজলের ছয় ভাই-বোন আদালতে এফিডেফিট করে জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘ দিন ধরেই নিখোঁজ রয়েছেন। তারা ফজলের কোনো খোঁজ জানেন না। তিনি বেঁচে আছেন কি না তারা সেটিও জানেন না। আর ফজল হিসেবে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি আসলে সবার ছোট ভাই সজল।