মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী গুরুতর অসুস্থ

শেরপুর শহরের নয়ানি বাজারের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী (৭১) গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। টাকার অভাবে তার সুচিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে পরিবার জানিয়েছে।

শেরপুর প্রতিনিধিআব্দুর রহিম বাদল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2019, 04:35 PM
Updated : 11 June 2019, 04:35 PM

পারিবারের সদস্য ও তার সহযোদ্ধারা জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগসহ নানা বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী শয্যাশায়ী। তার ডান হাত ও ডান পা অবশ হয়ে গেছে। হয়ে পড়েছেন বাকরুদ্ধ। কথা বলতে হয় ইঙ্গিতে। হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করতে হয়।

তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। ছেলে দুইজন স্নাতক পাস করে বেকার। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

বর্তমানে স্ত্রী ও মেয়ে তার সেবা করছেন। তার চিকৎসায় পরিবারের সব অর্থ শেষ হয়েছে। এখন চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করার মতো অবস্থা নেই তার পরিবারের।

গত শনিবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি এখন এই হাসাপাতালে ২০১ নম্বর কেবিনে জেলা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নাদিম হাসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বাকশক্তিহীন এই সাহসী মুক্তিযোদ্ধা রোববার দুপুরে বিডিনিউজ  টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির সঙ্গে ইঙ্গিতে মতবিনিময় করেন।

আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার আশায় তিনি চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য কামনা করেন।

তার মেয়ে মোহসিনা জাহান রিমা বলেন, “বাবা গত ছয় বছরে দুইবার স্ট্রোকের পর প্যারালাইজড হয়েছেন। তার ডান হাত ও পা অবশ; তিনি বাকশক্তিহীন।”

আশরাফ আলীর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম বলেন, “আমার স্বামী প্রায় ছয় বছর ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। আমাদের যতদূর সাধ্য আমরা তার চিকিৎসা করেছি। এখন আর আমাদের তেমন কোনো সাধ্য নাই। সরকার যদি চিকিৎসার জন্য কোনো সাহায্য করে তাহলে আমরা তার ভালো চিকিৎসা করাতে পারব।”

রণাঙ্গনের সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান রোববার আশরাফ আলীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে এই প্রতিনিধিকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা ১১ নম্বর সেক্টরের শামছুল আলাম কোম্পানী কমান্ডরের অধীনে একসঙ্গে এক জায়গায় ছিলাম। তিনি অত্যন্ত অকুতভয় এবং ক্যাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী যেকোনো যুদ্ধে অত্যন্ত বীরত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

“বর্তমানে তিনি খুবই অসহায় অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। তার দুইজন ছেলে স্নাতক পাস করে বেকার বসে আছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মনে করি, সরকার সাহায্য করলে হয়ত এই অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে দেশের বাইরে নিয়ে ভাল চিকিৎসা করা যেতে পারে।”

আরেক মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ দে কৃষ্ণ বলেন, “সরকারের কাছে আমাদের আবেদন মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীকে চিকিৎসার সাহায্য করলে এবং তার দুই ছেলেকে চাকরি ব্যবস্থা করলে এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি বাঁচতে পারবে।”

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নাদিম হাসান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপসহ বহুবিধ সমস্যায় ভূগছেন। অনেক দিন ধরে তিনি অসুস্থ।

তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।