শেরপুরে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

শেরপুরের নকলা উপজেলায় জমির বিরোধের জেরে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পরিবারের প্রতিপক্ষ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

শেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2019, 03:58 PM
Updated : 11 June 2019, 03:58 PM

একমাস আগে নকলা পৌর শহরের কায়দা এলাকায় এই ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি মামলা করেছেন ওই নারীর স্বামী।

মামলায় তিনি স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্টেরও অভিযোগ করেন।  

মামলায় অভিযোগ করা হয়, নকলা পৌর শহরের উপকণ্ঠে কায়দা গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে মো. শফিউল্লাহর সঙ্গে এক খণ্ড জমি নিয়ে তার সহোদর বড়ভাই আবু সালেহ (৫২), নেছার উদ্দিন (৪৮) ও সলিম উল্লাহর (৪৪) বিরোধ ও দেওয়ানী মোকদ্দমা চলে আসছে।

এর জের ধরে গত ১০ মে সকালে স্থানীয় গোরস্থান সংলগ্ন শফিউল্লাহর দখলীয় জমির ইরি-বোরো ধান আবু সালেহ ও তার লোকজন কাটতে গেলে শফিউল্লাহ বাধা দেন। এতে তিনি প্রতিপক্ষের ধাওয়ার মুখে পিছু হটে নকলা থানায় ছুটে যান। তখন আবু সালেহর নেতৃত্বে একদল লোক ধান কাটতে শুরু করলে শফিউল্লাহর তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ডাক-চিৎকার দিয়ে বাধা দিলে আবু সালেহর নির্দেশে তার ছোটভাই সলিমউল্লাহ, ভাইয়ের স্ত্রী লাখী আক্তারসহ কয়েকজন তার চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়ে টেনে-হেঁচড়ে জমির পাশের একটি ইউক্যালিপটাস গাছের সঙ্গে হাত বেঁধে ফেলে। এরপর অন্য গাছের সঙ্গে বাঁধে তার দুই পা।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, এরপর ওই নারীর গোপনাঙ্গসহ পেট, বুক ও পিঠে উপুর্যপরি কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকে। সেইসঙ্গে ওই নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করে লাকি আক্তার।

পরে খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে গুরুতর অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার এবং আবু সালেহ ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লাখী আক্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

কিন্তু পরে ওই দুইজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নির্যাতনে ওই নারীর রক্তক্ষরণ হয় এবং তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

ওই ঘটনায় শফিউল্লাহ গত ৩ জুন শেরপুরের আমলী আদালতে আবু সালেহসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৭ জনকে আসামি করে বিচারিক হাকিম শরীফুল ইসলাম খানের আদালতে একটি নালিশী মামলা করেন।

বিচারক শরীফুল ইসলাম খান ঘটনা তদন্ত করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জামালপুরের পিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।  

এ ব্যাপারে মামলার বাদী নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী শফিউল্লাহ বলেন,

“থানা পুলিশের এসআই ওমর ফারুক মহিলা কনস্টেবলসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ডলি খানমকে উদ্ধারের পরও কোনো প্রতিকার পাইনি।”

তিনি আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, “এমন বর্বর নির্যাতনের পরও তারা আজ বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। আর আমি অসহায়।।”

শফিউল্লাহর বড়ভাই মামলার আসামি আবু সালেহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ওইদিন জমিতে ধান কাটতে গেলে আমার ভাই শফিউল্লাহ ও তার স্ত্রী আমাদেরকে দা দিয়ে ধাওয়া করে। আমরা তা প্রতিরোধ করি এবং আমার ভাই শহিদুল্লাহর স্ত্রীকে আমার দুই ছোট ভাই-বউ ধান ক্ষেতের পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং পরে আমরা পুলিশকে খবর দেই।

“পরে পুলিশ এসে আমাদের থানায় নিয়ে ওইদিনের বিষয়টি আপস মীমাংসা করে দেয়।”

ভাইয়ের স্ত্রীকে বেঁধে রাখলেও নির্যাতন করা হয়নি এবং তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়নি বলে তার দাবি।

নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, জমি-জমার বিষয় নিয়ে ভাই-ভাইদের মধ্যে বিরোধ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে দুপক্ষকেই শান্ত করা হয়েছিল।

“গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।”

এ ব্যাপারে জামালপুর পিবিআইয়ের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রাণী সরকার বলেন, “মামলাটি এখনও হাতে পাইনি। পেলে অবশ্যই দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”