বাসযাত্রীকে চাকায় পিষে ‘হত্যা’: চালক ও কন্ডাক্টর গ্রেপ্তার

ভাড়ার ঝগড়ায় গাজীপুরে ‘বাস থেকে ফেলে চাকায় পিষে’ এক যাত্রীকে হত্যার অভিযোগে বাসটির চালক ও কন্ডাক্টরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2019, 12:08 PM
Updated : 10 June 2019, 04:40 PM

সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহের ধোবাউরা-হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে চালককে এবং রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলা থেকে কন্ডাক্টরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরা হলেন ‘আলম এশিয়া’ বাসের চালক রোকন উদ্দিন (৩৫) এবং কন্ডাক্টর আনোয়ার হোসেন (৩৮)। রোকন উদ্দিন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার লতিফপুর নয়াপাড়ার কামাল হোসেনের ছেলে এবং আনোয়ার হোসেন শেরপুরের নালিতাবাড়ির পোড়াবাড়ি এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।  

বাসভাড়া নিয়ে বিতন্ডার জেরে রোববার গাজীপুর সদরের বাঘের বাজার এলাকায় এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার পর তার উপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। 

জয়দেবপুর থানার এসআই আব্দুর রহমান বলেন, রোববার এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে হত্যার মামলার পর বাস চালক রোকন উদ্দিন তার মাকে নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউরা ও হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়।

কন্ডাক্টর আনোয়ার হোসেনকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়

“পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রোকন গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য কংস নদীতে ঝাঁপ দেয়। পুলিশও তার পিছু নিয়ে ঝাঁপ দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। আর মা কৌশলে পালিয়ে যান।”

এসআই আব্দুর রহমান আরও জানান, গোপন সংবাদ পেয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নালিতাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ হত্যার ঘটনায় জড়িত বাসটির হেলপারকে গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।

নিহত যাত্রী সালাহ উদ্দিন (৩৫) গাজীপুরের বাঘের বাজারে একটি ভাড়া বাড়িতে থেকে স্কটেক্স এ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানার গাড়ি চালাতেন। তিনি ঢাকার আলু বাজার এলাকার মৃত শাহাব উদ্দিনের ছেলে।

নিহতের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবার সস্ত্রীক সালাউদ্দিন ঈদের ছুটিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যান। রোববার তারা ময়মনসিংহ থেকে আলম এশিয়া পরিবহনের বাসে গাজীপুরের বাসায় ফিরছিলেন।

পথে ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সাথে পরিবহনের সহকারীর বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে গাড়ির ভিতরে সালাহ উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করে চালকের সহকারী। এ ঘটনা সালাহ উদ্দিন মোবাইল ফোনে তার স্বজনদের অবহিত করেন এবং বাঘের বাজার এলাকায় তাদের থাকতে বলেন।

নিহত সালাহ উদ্দিন

পরে জামালসহ ৫-৬ জন বাঘের বাজার এলাকায় ওই বাসটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঘের বাজার পৌঁছলে সালাহ উদ্দিনকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে তার উপর বাস চালিয়ে দেয় বলে জামালের অভিযোগ।

পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে তারা। পরে স্থানীয় মেম্বার বাড়ির আমতলী এলাকায় মহাসড়কে বাসটি ফেলে চালকসহ সহকারী ও কন্ডাক্টর পালিয়ে যায়। 

জয়দেবপুর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, নিহতের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে রোববার রাতে বাসের চালক, সহকারী, কন্ডাক্টার ও মালিকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার রোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং অন্যদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।