একজন সৎ অটোরিকশাচালক হারুন মিয়া

অটোরিকশাচালক হারুন মিয়ার মতো মানুষ এখনও আছেন বলেই দুনিয়াটা টিকে আছে, মন্তব্য করেছেন পোশাককর্মী ফজিলা খাতুন।

মারুফ আহমেদ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2019, 04:14 PM
Updated : 6 June 2019, 04:14 PM

ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ করতে একবছর পর বাড়ি পৌঁছে দরিদ্র পোশাককর্মী ফজিলা খাতুন দেখেন তিনি ব্যাগ ফেলে এসেছেন অটোরিকশায়; যেখানে ছিল তার একবছরের সঞ্চিত সব টাকাসহ কাপড়চোপড়, গয়না ও মোবাইল ফোন।

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া পরিস্থিতিতে গভীর রাতে সেই ব্যাগ হাতে ফজিলার বাড়িতে হাজির হন হারুন মিয়া। 

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামের ফজিলা খাতুন জানান, পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করতে এক বছর পর ঢাকা থেকে ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফেরেন তিনি।

ঢাকা থেকে বাসযোগে ভৈরব নেমে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন। রাত ১২টার দিকে বাড়ি পৌঁছার পর বুঝতে পারেন সঙ্গে আনা মালামালসহ ব্যাগটি ভুলে অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন।

তিনি বলেন, ব্যাগটিতে ছিল দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ৪৫ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন, পরিবার-পরিজনের জন্য কেনা ঈদের কাপড়চোপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র।

ফজিলা খাতুন জানান, ব্যাগ ফেলে আসার বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ ঘটনায় তার হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা নির্বাক হয়ে যান। তাদের কান্না আর বিলাপে পাড়া-প্রতিবেশীদের অনেকেই ছুটে আসেন।

তিনি বলেন, “এ অবস্থায় রাত দেড়টার দিকে মালামাল ভরতি ব্যাগটি নিয়ে হাজির হন অটোরিকশাচালক হারুন মিয়া। তিনি আমার হাতে ব্যাগটি তুলে দেন।”

ব্যাগ ফিরে পেয়ে ফজিলা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। ব্যাগ খুলে দেখতে পান সব জিনিসপত্র ঠিক আছে। কিছু খোয়া যায়নি।

“হারুন মিয়ার মতো মানুষ এখনও আছে বলেই দুনিয়াটা টিকে আছে।”

অটোরিকশাচালক হারুন মিয়া বলেন, ফজিলাকে নামিয়ে রাত ১টার দিকে তিনি সুলতানপুর বাজারে যান। এ সময় তিনি অটোরিকশার পিছনে একটি ব্যাগ দেখতে পান। বুঝতে পারেন ফজিলা ভুলে এটি ফেলে নেমে গেছেন।

“রাত ২টার দিকে ব্যাগটি ফেরৎ দিতে ফজিলাদের বাড়ি যাই। তার হাতে ব্যাগটি তুলে দিতেই সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।”

অটোরিকশাচালক হারুন মিয়ার বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে।