শ্বশুরবাড়িতে যুবক খুন, বছর শেষে গ্রেপ্তার ৩

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে যুবক খুন হওয়ার এক বছর পর এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2019, 12:31 PM
Updated : 3 June 2019, 12:32 PM

রোববার পুলিশের একাধিক দল ঢাকা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ কচুয়ার ছোট চরকাঠি গ্রামে মাটির নিচে পুঁতে রাখা ওই যুবকের শরীরের কিছু অংশ উদ্ধার করেছে।

নিহত আজিম (২৫) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কাউকান্দি গ্রামের মনজুল হকের ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।

প্রায় এক বছর আগে আজিম বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ছোট চরকাঠি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে খুন হন।

পুলিশ বলছে, হত্যার পর তার লাশ গুম করতে বাড়ির পাশে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয় বলে গ্রেপ্তাররা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

দেহাবশেষের মধ্যে পাওয়া গেছে তার ব্যবহৃত কালো রংয়ের একটি জিন্সের প্যান্ট, কিছু হাড় ও চুল। উদ্ধার হওয়া এসব দেহাবশেষ নিহত আজিমের বলে ধারণা করছে পুলিশ। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।

এই ঘটনায় কচুয়া থানার এসআই আবুল হাসান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন পাবনা সদরের মিনদাহ গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে বিপ্লব মোল্লা (২৫), তার স্ত্রী রিনা বেগম (২০) ও তার শ্যালক (১৪)। বয়স ষোলো বছরের কম হওয়ায় তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করা হলো না।

সোমবার দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য তুলে ধরেন।

পংকজ রায় সাংবাদিকদের বলেন, গোপন সংবাদ পেয়ে কচুয়ার একটি হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক দল তদন্তে মাঠে নামে। মাঠে নেমে তিনজন সন্দেহভাজনকে পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মাটির নিচ থেকে একজন মৃত ব্যক্তির শরীরের কিছু দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।

“আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এসব দেহাবশেষ নিহত আজিমের। ফরেনসিক প্রতিবেদন হাতে পেলে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারব। হত্যার প্রধান আসামি নিহতের স্ত্রী রুবিনা বেগম পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আমরা এখনও গ্রেপ্তার করতে পারিনি।”

তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় পোশাক কারখানায় কাজের সূত্রে সুনামগঞ্জের আজিমের সঙ্গে বাগেরহাটের কচুয়ার রুবিনার পরিচয় হয়। এরপর তারা দুজনে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পরেই তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া বিবাদ লেগে ছিল। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে আত্মীয়-স্বজনরা তাদের বিরোধ মেটাতে সালিস বৈঠক পর্যন্ত করে।

“তাতেও তাদের বিরোধ না মেটায় আজিমের স্ত্রী রুবিনা বেগম ও তার স্বজনরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেছেন।”

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে এসপি পঙ্কজ বলেন, হত্যাকারীরা কৌশলে আজিমকে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে তার শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসতে বলেন। আজিম শ্বশুরবাড়ি এলে ওইদিন আজিমের ছোট ভায়রা বিপ্লব, শ্যালিকা রিনা ও কিশোর শ্যালক মিলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে লাঠি দিয়ে মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ গুম করতে বস্তাবন্দি করে বাড়ির পাশে বাগানে মাটির নিচে পুঁতে রেখে দেয়।

তারা আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন বলে তিনি জানান।