এ কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবারটি এখানে ওখানে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে স্বজনের ভাষ্য।
বৃহস্পতিবার মেয়েটির (১৬) বাড়ি গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে প্রবেশের দরজা খোলা থাকলেও ভেতরে প্রতিটি ঘর তালাবদ্ধ ছিল।
প্রতিবেশীরা জানান, কয়েকদিন ধরে তারা বাড়িতে থাকছে না; কখন আসে যায় কেউ জানে না।
ওই ছাত্রীর মা ও বড়ো ভাইয়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। বড়ো ভাই পঞ্চগড় বাজারের একটি মোবাইল ফোন বিক্রির দোকানে চাকরি করেন; তবে সেখানে ১০/১২ দিন ধরে ছুটিতে আছেন বলে দোকানের লোকজন জানান।
এর আগে গত মঙ্গলবার কয়েকজন সাংবাদিককে মেয়েটির বড়ো ভাই সাক্ষাৎ দিয়েছেন।
এ সময় তিনি বলেন, “মামলা করার পর অনেকের মাধ্যমে আসামিরা বিষয়টি আপস-মীমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছে। যারা আসছে তাদের আমরা চিনি না। এছাড়া বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়িতে আর কোনো পুরুষ মানুষ নাই। এজন্যই লোকজনের নানা কথায় চাপ সামলাতে না পেরে কোনো সময় মা-বোন বাড়িতে থাকে না।”
পঞ্চগড় সদর থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা গত ১৭ মে পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেছেন।
এ মামলায় ওইদিনই পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারী (প্রহরী) ফজলুল হক সাগর (৩০) এবং কোচিংয়ে ওই ছাত্রীর এক সহপাঠীকে (১৬) গ্রেপ্তার করা হয়।”
এসআই জাহেদুল বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেনি। বর্তমানে সাগর পঞ্চগড় কারাগারে এবং আরেক কিশোর রাজশাহী কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে।
সাগর শহরের মিঠাপুকুর মহল্লার আকবর আলীর ছেলে। সহপাঠীর বয়স ১৬ বছরের বেশি না হওয়ায় নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হলো না।
এসআই জাহেদুল বলেন, আপসের চাপ বা হুমকির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এরপরও আসামিদের রিমান্ডে পেলে সব বিষয়ে তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।
মামলার এজাহারের বরাতে এসআই জাহেদুল বলেন, ওই ছাত্রী প্রতিদিন সকাল ৮টায় বাড়ির কিছু দূরে একজন শিক্ষকের বাড়িতে কোচিংয়ে যেতেন। প্রায় পাঁচ-ছয় মাস আগে একদিন শিক্ষক না থাকায় কোচিং ক্লাস হয়নি। এদিন একই কোচিং ক্লাসে পড়ুয়া এক কিশোরের (বর্তমানে গ্রেপ্তার) সঙ্গে ডিসি পার্ক এলাকায় ঘুরতে যান মেয়েটি।
“ওই এলাকায় আগে থেকে ওত পেতে থাকা সাগর সঙ্গে থাকা সহপাঠীর যোগসাজসে ওই ছাত্রীকে একটি কবরস্থান সংলগ্ন পরিত্যক্ত ইটের ঘরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে মেয়েটির সহপাঠী সেখান থেকে সটকে পড়েন।
“পরে সাগর ওই ছত্রীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নগ্ন করে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এক পর্যায়ে সাগর নিজের মোবাইল ফোনে তার অশ্লীল কর্মকাণ্ডের ভিডিও ধারণ করে।”
এরপর ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিষয়টি কাউকে না বলতে হুমকি দিয়ে সাগর পালিয়ে যায় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে সাগর ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় পথে অশালীন আচরণ করতে থাকে এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতদিন ভয়ে মেয়েটি পরিবারের কাউকে বিষয়টি জানাননি। এর মধ্যে সাগর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয় এবং ১৫ মে ছাত্রীর বড়ো ভাই ওই ভিডিওটি দেখতে পান। পরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ছাত্রীটি পরিবারের সদস্যদের কাছে সবকিছু খুলে বলেন।
পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল ইসলাম বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে সাগরের বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। এজন্য তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দিনাজপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”
সাগরের বড় ভাই ফরিদ হোসেন বলেন, “আমার ভাই যদি এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তাহলে তো সেটা অপরাধ। আমি বেশি কিছু জানি না। সে যদি সত্যিকারে অপরাধী প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিচার হবে।”
আপসের জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।